Media School

Dhaka    Thursday, 21 November 2024

By সজীব সরকার

‘রঙ্গপুর বার্ত্তাবহ’ : বাংলাদেশের প্রথম সংবাদপত্র

Media School June 28, 2020

ঔপনিবেশিক শাসনবিরোধী রাজনৈতিক ভূমিকার অভিযোগে বন্ধ করে দেয়া হয় `রঙ্গপুর বার্ত্তাবহ`।

ঊনিশ শতকের মাঝামাঝি পর্যন্ত ভারতীয় উপমহাদেশের এ অংশের মধ্যে শিক্ষার বিস্তার ও শিক্ষিতজনদের কর্মসংস্থানের ব্যবস্থা মোটামুটি কলকাতাকেন্দ্রিকই ছিলো। ফলে ওই সময় পর্যন্ত কলকাতার বাইরের কোনো অঞ্চল ও বিশেষ করে কোনো মফস্বল এলাকা থেকে সংবাদপত্র প্রকাশ, সম্পাদনা বা পাঠের কোনো পরিবেশ বা সুযোগ তৈরি হয়নি। এর মধ্যে পূর্ববাংলার অবস্থা ছিলো বেশি শোচনীয়। ঐতিহাসিকদের মতে, ওই সময় কলকাতার সৌকর্য বৃদ্ধির লক্ষ্যে পূর্ববাংলা মূলত ‘হিন্টারল্যান্ড’ হিসেবে ব্যবহৃত হয়েছে; তাই এখানে শিক্ষিত সমাজব্যবস্থা বা সংবাদপত্র বিকাশের মতো কোনো পরিবেশ তৈরি হতে পারেনি। তবে এ অবস্থাও খুব বেশিদিন স্থায়ী হয়নি। ওই সময় ঢাকা ছিলো সারা বাংলারই দ্বিতীয় নগরী। তাই ঊনিশ শতকের ত্রিশের দশকে এসে এখানে শিক্ষা ও সংবাদপত্রের প্রয়োজন অনুভূত হতে শুরু করে। ১৮৩৬ সালে ‘ক্যালকাটা মান্থলি জার্নাল’-এ মুদ্রিত একটি প্রতিবেদনে এর পক্ষে প্রমাণ পাওয়া যায় :

“The English School at Dacca is going on very well; the number of the students now amounts to one hundred and fifty. A society has lately been established for the cultivation of the Bengally language, which, contemplates the establishment of a newspaper in English and Bengally.”

তবে এর পরও দীর্ঘ সময় পর্যন্ত ঢাকা থেকে কোনো সংবাদপত্র প্রকাশিত হয়নি। এ ক্ষেত্রে অবশ্য রংপুর পথিকৃৎ হয়ে আছে। এখন পর্যন্ত পাওয়া তথ্য অনুযায়ী ‘রঙ্গপুর বার্ত্তাবহ’-ই হলো পূর্ববঙ্গ বা বর্তমানের বাংলাদেশ থেকে প্রকাশিত সবচেয়ে পুরনো সংবাদপত্র। ১৮৪৭ সালের আগস্ট-সেপ্টেম্বর মাসের দিকে রংপুর থেকে এই সাপ্তাহিকটি আত্মপ্রকাশ করে। এ ব্যাপারে ‘সংবাদ প্রভাকর’ পত্রিকায় লেখা হয় : “১২৫৪, ভাদ্র। ... জিলা রঙ্গপুরে ‘রঙ্গপুর বার্ত্তাবহ’ নামক এক মহোপকারক সমাচার পত্র প্রকটিত হয়।”

রংপুরের কুণ্ডী পরগণার বিদ্যোৎসাহী জমিদার কালীচন্দ্র রায় চৌধুরীর আর্থিক আনুকূল্যে পত্রিকাটি প্রকাশিত হয়। এর সম্পাদনা ও সার্বিক পরিচালনার দায়িত্বে ছিলেন গুরুচরণ রায়। পত্রিকাটি প্রকাশের চতুর্থ বছর (৩রা ভাদ্র, ১২৫৮) তাঁর মৃত্যু হলে পত্রিকাটির স্বত্ব কিনে নেন নীলাম্বর মুখোপাধ্যায়। ১৮৫১ সালের ১৮ সেপ্টেম্বর সংবাদ প্রভাকর-এ প্রকাশিত নীলাম্বর মুখোপাধ্যায়ের এক চিঠিতে বলা হয়, তিনি পত্রিকাটির সম্পাদনার দায়িত্ব নিয়েছেন।

রংপুরের ‘বার্ত্তাবহ যন্ত্রালয়’ থেকে প্রতি মঙ্গলবার প্রকাশিত হতো রঙ্গপুর বার্ত্তাবহ। তখন এর প্রচারসংখ্যা ছিলো বছরে ১০০ কপি। পত্রিকাটির সব কপির মোট মূল্য ছিলো ৬ রুপি; অগ্রিম পরিশোধে ৪ রুপি।

পুরো এক দশক টিকে থাকা রঙ্গপুর বার্ত্তাবহ এমন একটি সময়ে প্রকাশিত হয়, যখন সংবাপত্রের বিষয়বস্তু ক্রমেই রাজনীতিমুখী হতে শুরু করেছে। এর প্রভাবেই হয়তো ১৮৫৭ সালে প্রথম স্বাধীনতা আন্দোলনের সময় রাজনীতি এ সংবাদপত্রটিরও প্রধান বিষয়বস্তুতে পরিণত হয়। কিন্তু আন্দোলন ব্যর্থ হওয়ার পরই সংবাদপত্র নিয়ন্ত্রণে তৎকালীন গভর্নর লর্ড ক্যানিং ১৮৫৭ সালের ১৩ জুন '১৫ নং আইন' (১৮৫৭ সনের পনের আইন) প্রবর্তন করেন। ঔপনিবেশিক শাসনবিরোধী রাজনৈতিক ভূমিকার অভিযোগে এ আইনের আওতায় বন্ধ করে দেয়া হয় পূর্ববাংলার প্রথম সংবাদপত্র রঙ্গপুর বার্ত্তাবহের প্রকাশনা। সংবাদপত্রের পরবর্তী ইতিহাসের ভিত্তি হিসেবে এ ঘটনা ঐতিহাসিকদের কাছে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ হয়ে রয়েছে।

তথ্যসূত্র :

ধর, সুব্রত শংকর (১৯৮৬) : বাংলাদেশের সংবাদপত্র।

bangladeshtimes.com