Media School

Dhaka    Thursday, 05 December 2024

By সজীব সরকার

যোগাযোগের দক্ষতা বাড়ানোর ৫ কৌশল

Media School November 24, 2024

যোগাযোগের দক্ষতা বাড়িয়ে তোলা সবার জন্যই খুব জরুরি। প্রতীকী ছবি।

জীবনে সফলতার নানা সূত্র রয়েছে। এসব সূত্র আবার স্থান-কাল-পাত্র ভেদে ভিন্ন হতে পারে। অর্থাৎ, একটি সূত্র একজনের ক্ষেত্রে যতোটা কাজ করবে, সেটি অন্য কারো ক্ষেত্রে হয়তো একইরকম ফল দেবে না। কিন্তু, যোগাযোগের দক্ষতা এমন একটি সূত্র, যা স্থান-কাল-পাত্র নির্বিশেষে প্রায় সবার জন্যই সমানভাবে কার্যকর ও জরুরি।

যোগাযোগের মাধ্যমে মানুষ নিজেকে অন্যের কাছে প্রকাশ করে। নিজের আশা-আকাঙ্ক্ষা, কর্মপরিকল্পনা বা দক্ষতা-যোগ্যতার প্রমাণ তুলে ধরতেও দরকার এই দক্ষতা। এ কারণেই যোগাযোগের দক্ষতা থাকা সবার জন্যই খুব দরকার।

যোগাযোগের ভালো দক্ষতা শিক্ষার্থীদের জন্য খুব ভালো ফল দিতে পারে। এ দক্ষতা থাকলে শিক্ষক-শিক্ষার্থীর মধ্যে একটি ইতিবাচক ও গঠনমূলক সম্পর্ক গড়ে উঠতে পারে। শিক্ষার্থীরা নিজেদের অ্যাকাডেমিক প্রয়োজনগুলো শিক্ষকদের কাছে স্পষ্টভাবে তুলে ধরতে পারেন। শিক্ষকরাও সত্যিকার অর্থে শিক্ষার্থীদের মেধার বিকাশ ঘটানোর মতো পরিবেশ তৈরি করতে পারেন সহজেই। শ্রেণিকক্ষের আলোচনা কিংবা অ্যাসাইনমেন্ট, প্রেজেন্টেশন বা পরীক্ষার মতো নানা পদ্ধতির মূল্যায়নেও শিক্ষার্থীরা তুলনামূলকভাবে অনেক ভালো করতে সক্ষম হবেন।

কর্মজীবনে প্রবেশের জন্য চাকরির ইন্টারভিউ বোর্ডে সফলতার অনেকখানিই নির্ভর করে যোগাযোগ দক্ষতার ওপর। কর্মজীবনে প্রবেশের পরও এ দক্ষতা পেশাগত উৎকর্ষের পেছনে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে। চাকরি বা ব্যবসাসহ যে-কোনো কোনো পেশার ক্ষেত্রে যোগাযোগ দক্ষতা থাকা অপরিহার্য।

এসব কারণে, যোগাযোগের দক্ষতা বাড়িয়ে তোলা সবার জন্যই খুব জরুরি। এখানে তুলে ধরা হলো এ দক্ষতা বাড়িয়ে তোলার ৫টি সহজ কৌশল :

১. সক্রিয় শ্রবণ (অ্যাকটিভ লিসেনিং) বাড়ানো : যে-কোনো পরিস্থিতিতে কথা শুনতে হবে গভীর মনোযোগ দিয়ে। যখন যার সঙ্গে যে বিষয়ে আলোচনা হচ্ছে, সেদিকে পরিপূর্ণ মনোযোগ না দিলে অপরপক্ষের বক্তব্যের গুরুত্বপূর্ণ বার্তা বা ইঙ্গিত নজর এড়িয়ে যেতে পারে। তাই, কথা শুনতে হবে সক্রিয় শ্রোতা হয়ে।

২. অবাচনিক (নন-ভারবাল) যোগাযোগের ইঙ্গিতগুলো বুঝতে হবে : গবেষণায় দেখা গেছে, মানুষের যোগাযোগের সবচেয়ে বড় অংশ জুড়ে থাকে অবাচনিক নানা ইঙ্গিত বা বার্তা। যেমন : মুখের অভিব্যক্তি, চোখের ইশারা বা শারীরিক অঙ্গভঙ্গি ইত্যাদি। শারীরিক এ ভাষার অর্থগুলো চিনতে বা বুঝতে শেখা জরুরি। মুখের কথা (বাচনিক) ও অবাচনিক ভাষা - এ দুইয়ে মিলেই একজন ব্যক্তিকে পরিপূর্ণভাবে বোঝা সম্ভব। এর যে-কোনো একটিকে উপেক্ষা করলে বা বুঝতে ব্যর্থ হলে যোগাযোগ ফলপ্রসূ হওয়ার সম্ভাবনা কমে যায়।

৩. ভাষাগত দক্ষতা বাড়ানো : যোগাযোগের জন্য ভাষাগত দক্ষতা থাকা দরকার। ভাষাজ্ঞান সমৃদ্ধ হলে এবং সহজ ও সাবলীলভাবে কথা বলতে জানলে যোগাযোগ অনেক সহজ ও কার্যকর হতে পারে। এজন্য ব্যাকরণের জ্ঞান বাড়ানোর পাশাপাশি ভালো মানের সাহিত্য পড়া, গান শোনা, চলচ্চিত্র দেখা ইত্যাদি পদ্ধতি অবলম্বন করা যেতে পারে।

৪. উপস্থাপনা ও বক্তৃতার দক্ষতা বাড়ানো : সহজ করে ও গুছিয়ে কথা বলার চর্চা যেমন জরুরি, তেমনি অন্যের কাছে নিজেকে তুলে ধরতে হলে বড় আকারের অডিয়েন্সের সামনেও জড়তা কাটিয়ে সাবলীলভাবে কথা বলতে শেখা দরকার। শিক্ষাজীবনে শ্রেণিকক্ষে প্রেজেন্টেশন, চাকরির ইন্টারভিউ বোর্ড বা কর্মক্ষেত্রে প্রবেশের পর প্রজেক্টের উপস্থাপনা - এমন নানা ক্ষেত্র রয়েছে যেখানে উপস্থাপনা ও বক্তৃতার (পাবলিক স্পিকিং) দক্ষতা দরকার হয়। এজন্য আয়নার সামনে বা বন্ধুদের সামনে কথা বলার চর্চা, বিতর্ক ও বক্তৃতা প্রতিযোগিতায় অংশ নেওয়ার মতো সুযোগগুলো কাজে লাগানো দরকার।

৫. স্পষ্ট করে ও অল্প কথায় নিজেকে তুলে ধরতে শেখা : এলোমেলো ও অস্পষ্টভাবে কথা বললে যোগাযোগের উদ্দেশ্য ব্যর্থ হয়; কেননা, এতে অপরপক্ষের কাছে নিজের বার্তা পরিষ্কার হয় না। অকারণ খুব বেশি কথা বললেও একই সমস্যা হতে পারে। এ কারণে, যা বলতে চান, সেটি খুব স্পষ্ট ভাষায় ও যতোটা সম্ভব কম কথায় তুলে ধরা শিখতে হবে।

যোগাযোগের দক্ষতা বাড়াতে হলে আরো অনেক কৌশল শেখার প্রয়োজন রয়েছে। তবে, প্রাথমিকভাবে এই ৫টি কৌশল চর্চা করা যেতে পারে। এসব কৌশল রপ্ত করতে পারলে ক্রমেই ব্যক্তিগত ও পেশাগত পর্যায়ে নিজের বিকাশ ঘটানোর সুযোগ বাড়তে পারে।

*লেখাটি প্রথম প্রকাশিত হয় টকঅবদ্যটাইম ডটকম-এ, ১২ নভেম্বর ২০২৪। সম্পাদকের অনুমতিক্রমে পুনঃপ্রকাশিত।