By সজীব সরকার
বাংলা ভাষা : দৈনন্দিন চর্চায় ভুলের ধরন
Media School May 10, 2024
প্রতীকী ছবি।
মাতৃভাষা হলেও সবসময় আমরা নির্ভুলভাবে বাংলা বলতে বা লিখতে পারি না। বাংলায় কথা বলা ও লেখার ক্ষেত্রে আমরা প্রায়ই কিছু ভুল করি। সবচেয়ে বেশি যে ভুলগুলো আমাদের হয়, এর মধ্যে রয়েছে :
বলার ক্ষেত্রে
১. ভুল উচ্চারণ ও
২. শব্দের ভুল প্রয়োগ
লেখার ক্ষেত্রে
১. ভুল বানান ও
২. শব্দের ভুল প্রয়োগ
শব্দের বানান ও উচ্চারণ পরস্পর সম্পর্কিত। সঠিক বানানটি জানলে এর উচ্চারণে ভুল হওয়ার ঝুঁকি কমবে। আবার, শব্দের সঠিক উচ্চারণ জানা থাকলে লেখার সময় বানান ভুল হওয়ার ঝুঁকিও কম থাকবে। যেমন : কেউ কেউ 'সম্ভাবনা' উচ্চারণ করলেও ভুল করে লিখছেন 'সম্ভবনা'। আবার, 'আশীর্বাদ'-কে লিখছেন 'আর্শীবাদ'। অর্থাৎ, শব্দের উচ্চারণের সঙ্গে বানান মিলিয়ে দেখা হচ্ছে না; দেখলে এমন ভুল হতো না।
কিছু ক্ষেত্রে বানান বা শব্দটি ঠিক থাকলেও এর প্রয়োগে আমাদের ভুল হয়। যেমন : প্রেক্ষিত, পরিপ্রেক্ষিত ও প্রেক্ষাপট - এ তিন শব্দের সঠিক প্রয়োগ সবসময় চোখে পড়ে না। তিনটি শব্দই সঠিক এবং এদের বানানও নির্ভুল; তবে, এদের প্রয়োগ সবসময় ঠিকভাবে হচ্ছে না।
উদাহরণ হিসেবে বলা যেতে পারে :
কোনো ঘটনার 'প্রেক্ষাপট' বোঝাতে 'প্রেক্ষিত' শব্দটি হরহামেশাই ব্যবহার করা হচ্ছে। যেমন : 'এ ঘটনার প্রেক্ষিতে তিনি ওই সিদ্ধান্ত নিয়েছেন।' দৈনন্দিন সাধারণ আলোচনা, সাহিত্য ও সংবাদ - সর্বত্রই শব্দটির এমন ব্যবহার চোখে পড়ে। কোনো ঘটনার প্রেক্ষাপট বা পটভূমি (perspective/background) অর্থে 'প্রেক্ষিত' শব্দের ব্যবহার ভুল। কারণ, 'প্রেক্ষিত' মোটেও 'প্রেক্ষাপট' অর্থ বহন করে না। 'প্রেক্ষিত' শব্দটির ব্যুৎপত্তি লক্ষ করলে দেখবো, 'প্রেক্ষণ' বা 'প্রেক্ষা' থেকে এটি এসেছে। প্রেক্ষণ বা প্রেক্ষা শব্দের অর্থ হলো দেখা বা দর্শন করা (to see)। এটি একটি ক্রিয়াবাচক শব্দ (verb)। প্রেক্ষণ-এর বিশেষণ (adjective) হলো 'প্রেক্ষিত', যার অর্থ : যা দেখা হয়েছে বা দর্শন করা হয়েছে (seen)। তাই, কোনো ঘটনার প্রেক্ষাপট বোঝাতে 'প্রেক্ষিত' বলা বা লেখা ভুল। প্রেক্ষাপট-এর বিকল্প হতে পারে 'পরিপ্রেক্ষিত'; কোনোভাবেই প্রেক্ষিত শব্দটি নয়।
একইভাবে আশঙ্কা/সম্ভাবনা, আবিষ্কার/উদ্ভাবন, হিসেব/হিসাব কিংবা আটক/গ্রেপ্তার - এমন ভিন্ন অর্থের শব্দগুলোকে প্রায়ই সমার্থক বা একটিকে অন্যটির বিকল্প হিসেবে ব্যবহার করা হচ্ছে যা আসলে ভুল।
এ ছাড়া ওপর/উপর, ওঠা/উঠা, ণ/ন, শ/ষ/স, ই-কার বা ঈ-কার কিংবা শব্দের শেষে স্ত বা স্থ-এর ব্যবহার - এসব ক্ষেত্রেও অনেক ভুল হচ্ছে।
এভাবে, বাংলায় কথা বলা অথবা বাংলা লেখার সময় উচ্চারণ, বানান ও প্রয়োগে ভুল খুব সাধারণভাবে অর্থাৎ সবচেয়ে বেশি হচ্ছে।
এসব ভুল এড়াতে বাংলা ব্যাকরণের চর্চা জরুরি। বিশেষ করে ণ-ত্ব ও ষ-ত্ব বিধান, উপসর্গ ও অনুসর্গের ব্যবহার এবং প্রকৃতি-প্রত্যয়ের নিয়মগুলো নিয়মিত চর্চা করলে ভুলগুলো অনেকটাই কমে আসবে। শব্দের বানান ও উচ্চারণ একসঙ্গে চর্চা করলে নিয়মগুলো সহজে মনে থাকবে। এর পাশাপাশি ভালো মানের বাংলা সাহিত্য পড়ার মাধ্যমেও এ ধরনের ভুল কমিয়ে আনা সম্ভব। একাধিক ভাষার সাহিত্য পাঠ এবং একাধিক ভাষা শেখার চেষ্টা করাও এ ক্ষেত্রে নানাভাবে কাজে আসবে।
তাহলে, মাতৃভাষা হলেই যে এটি নির্ভুলভাবে জানা থাকবে, এমন নয়। একটি ভাষার ব্যাকরণ জানা ও সচেতন চর্চা ছাড়া নির্ভুলভাবে সেটি শেখা কিংবা প্রয়োগের সক্ষমতা তৈরি হতে পারে না। বাংলার পাশাপাশি ইংরেজি কিংবা অন্যান্য ভাষার ক্ষেত্রেও একই কথা প্রযোজ্য।