By নুসরাত জাহান
বডি শেইমিং (Body-Shaming)
Media School April 30, 2021

দৈহিক গড়ন নিয়ে বিরূপ মন্তব্য করা উত্যক্ত করার শামিল। ছবি : istockphoto.com
বডি শেইমিং (body-shaming) বা কায়া-কটূক্তি হলো কারও দেহের আকার, গড়ন বা ওজন ইত্যাদি সম্পর্কে নেতিবাচক মন্তব্য করা। একজন ব্যক্তিকে উত্যক্ত করার (bullying) এটিও আরেকটি ধরন।
একজন ব্যক্তির ওজন বা দেহের আকার-আকৃতি সাধারণত সমাজের নির্দিষ্ট করে দেওয়া পরিমাপের সঙ্গে না মিললে অনেক সময় ওই ব্যক্তিকে কটাক্ষ করা হয়। যেমন : সমাজের সাধারণ প্রবণতার সঙ্গে তুলনা করে কাউকে মোটা বা রোগা হিসেবে আখ্যা দেওয়া হয়। যখন কাউকে মোটা বা রোগা বলা হয়, তখন এ ধরনের সংজ্ঞায়নের মধ্যে প্রায়ই তাচ্ছিল্য বা অবজ্ঞার মনোভাব থাকে।
বডি শেইমিং কেবল ব্যক্তিগত ভাবনা বা মতামত নয়; এর মধ্যে একটি বৃহৎ সাংস্কৃতিক-রাজনৈতিক প্রেক্ষাপটও রয়েছে। একটি সমাজ যে পরিমাপের ভিত্তিতে নারীকে 'আদর্শ ও সুন্দর' বলে স্থির করে দেয়, সেই বৈশিষ্ট্যের সঙ্গে না মিললে একজন নারীকে ব্যক্তিগত-সামাজিক-সাংস্কৃতিক এমনকি রাজনৈতিক পরিমণ্ডলেও অবজ্ঞার শিকার হতে হয় বা হেনস্তা হতে হয়।
অর্থাৎ কোনো ব্যক্তির ওজন বা আকৃতি যদি তার সমাজের আকাঙ্ক্ষার সঙ্গে না মেলে, তখন তাকে ঘরে-বাইরে নানা মানুষের কাছ থেকে বিরূপ বা রূঢ় মন্তব্য শুনতে হয়। 'আদর্শ দৈহিক গড়ন'-এর এই ভাবাদর্শ বিজ্ঞাপন, নাটক, চলচ্চিত্র বা সাহিত্যসহ নানা মাধ্যমের বদৌলতে সমাজের মানুষের মনে দৃঢ়বদ্ধ হয়ে থাকে।
এভাবে কাউকে কালো, টেকো, খাটো, মোটা বা রোগা ইত্যাদি বলে অবজ্ঞা বা তাচ্ছিল্য করার এমন প্রবণতা নতুন নয়। তবে গণমাধ্যম এবং বিশেষ করে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমগুলো বিকাশ লাভের পর এ প্রবণতা বেড়েছে বলে নানা গবেষণায় প্রমাণ মিলেছে।
গণমাধ্যমসহ নানা ব্যবসায়িক প্রতিষ্ঠান নিজেদের স্বার্থে প্রকারান্তরে বডি শেইমিংকে আশ্রয়-প্রশ্রয় দিয়ে যাচ্ছে। স্বামীকে খুশি করা থেকে শুরু করে পেশাগত সাফল্য - সবকিছুর জন্যেই নারীকে সুন্দরী হতে হবে এবং এজন্যে তাকে লম্বা, চিকন ও ফর্সা হতে হবে- এমন বার্তা প্রতিদিনের বিজ্ঞাপন, নাটক, সিনেমাসহ নানা মাধ্যমে দেখা যায়। এর মধ্য দিয়ে বডি শেইমিং বা কায়া-কটূক্তির মতো উত্যক্তকরণ প্রক্রিয়া উৎসাহিত হচ্ছে।
সমাজের 'আদর্শ দৈহিক গড়ন'-এর বাইরে থাকা স্থূলকায় বা ক্ষীণকায় পুরুষরাও একইভাবে বডি শেইমিংয়ের শিকার হয়ে থাকে। গবেষকদের মতে, একটি সমাজ সাধারণত পুরুষের দৈহিক আকার ও গড়নের মধ্যে সবসময় প্রচণ্ড 'পৌরুষ' সন্ধান করে থাকে। অর্থাৎ পরিবারের একজন 'রক্ষাকর্তা হিসেবে পুরুষ হবে দীর্ঘকায় এবং শক্তিশালী - সমাজ এমনটাই আশা করে। ফলে পুরুষসঙ্গী খোঁজার সময় অনেক ক্ষেত্রেই পুরুষটি কতোটা লম্বা ও স্বাস্থ্যবান - তা ওই ব্যক্তির মেধা, সততা, নৈতিকতা বা অন্যান্য যোগ্যতার চেয়ে বেশি বড় হয়ে ওঠে।
অর্থাৎ শারীরিক কোনো বৈশিষ্ট্য নিয়ে কাউকে অবজ্ঞা দেখানো বা অপমানসূচক মন্তব্য করা হলো বডি শেইমিং। এই প্রবণতা প্রতিরোধ করা দরকার কেননা বডি শেইমিং প্রায়ই এর ভিকটিমের মধ্যে হতাশা ও বিষণ্ণতার জন্ম দেয়।