By সজীব সরকার
নারীবিদ্বেষী সংস্কৃতি বিলুপ্ত হোক
Media School July 21, 2020
নারী সম্পর্কে অবৈজ্ঞানিক কিছু ধারণা ও নানা কুসংস্কার সমাজে নারীকে প্রান্তিক অবস্থানে দাঁড় করিয়েছে। এর বিপরীতে পুরুষ সম্পর্কে যে উচ্চ-মূল্যায়ন, সেটিও একইভাবে অবৈজ্ঞানিক কিছু ধারণা ও কুসংস্কারেরই ফল। আপাতদৃষ্টিতে একে ‘সরল ও নিরীহ ভুল’ মনে হলেও সমাজে বিদ্যমান এই অনিয়ম আসলে নিছক অজ্ঞতাপ্রসূত নয়।
মানুষের সাথে মানুষের সম্পর্ক যতোটা সামাজিক, আসলে তার চেয়ে অনেক বেশি রাজনৈতিক। মানুষের সাথে মানুষের সম্পর্ক নির্ণীত হয় আসলে সামাজিক যোগসূত্রে নয় বরং ক্ষমতার ভিত্তিতে। পারিবারিক সম্পর্কগুলোও এর ব্যতিক্রম নয়; যে কারণে স্বামী কর্তৃত্ব করেন স্ত্রীর ওপর, ভাই কর্তৃত্ব করে বোনের ওপর। এই একই কারণে একসময় বাবার স্থলে ‘পরিবারের বড় ছেলে’ ওই পরিবারের কর্তা হয়ে ওঠে। এই ‘রাজনীতি’ নারীকে এমনকি তার নিজের ওপরও অধিকার দেয় না; কি শরীর, কি মন - ব্যক্তিটি নারী হলেও কর্তৃত্বটা পুরুষের।
এই কর্তৃত্ব, এই ক্ষমতালিপ্সা সমাজের ‘অসচেতন ভুল’ নয় বরং রাজনৈতিক উদ্দেশ্য প্রণোদিত এজেন্ডা। নারীকে তার নিজের ও সমাজ-রাষ্ট্রের সব অনুষঙ্গ থেকে যতোটা আলাদা রাখা যাবে, পুরুষের পক্ষে তা ততো বেশি লাভজনক হবে - পুরুষ এটি মনে-প্রাণে বিশ্বাস করে। প্রবলভাবে পুরুষতান্ত্রিক শিল্প-সাহিত্য এবং নানা ধরনের সাংস্কৃতিক ও ধর্মীয় রীতি-আচার-চর্চা এই ষড়যন্ত্রে ‘আগুনে ঘৃতাহুতি’র মতো কাজ করছে।
এ ধরনের চর্চা কালের পরিক্রমায় নারীবিদ্বেষী একটি ডিসকোর্সের জন্ম দিয়েছে, নারীবিদ্বেষী একটি সংস্কৃতির জন্ম দিয়েছে। এ সংস্কৃতিতে নারী কেবল পুরুষের প্রয়োজন মেটানোর বস্তু। এ সংস্কৃতিতে নারী কেবল মাংসপিণ্ড, যা পুরুষের যৌনলিপ্সা মেটাতে ব্যবহৃত হবে। পুরুষতান্ত্রিক সমাজব্যবস্থায় পুরুষ নারীকে ‘শো-পিস’ হিসেবে তৈরি করতে চায়। এ সংস্কৃতিতে নারী কেবল পুরুষের ক্রীতদাস। এ সংস্কৃতিতে নারী বরাবরই পুরুষের আক্রমণের শিকার।
দুঃখজনকভাবে অনেক নারীও এই অপচর্চাকে স্বাভাবিক ও সঠিক বলে মনে করেন; বাকি নারীরা একেই তাদের নিয়তি বলে মেনে নিয়েছেন। খুব কম নারীই নিজেকে পূর্ণাঙ্গ মানুষ হিসেবে ভাবতে শিখেছেন এবং প্রচলিত সমাজ-কাঠামোকে চ্যালেঞ্জ করছেন। এই চ্যালেঞ্জ সবাইকেই নিতে হবে। প্রথমত সব নারীকেই। আর পুরুষেরও উচিত হবে সব অন্যায় স্বীকার করে নারীর অধিকার আদায়ের আন্দোলনে সহযাত্রী হওয়া; করুণা করে নয়- অপরাধবোধ থেকে, দায়বোধ থেকে।
এই সময়ে এসে নারীর সমাজ-বাস্তবতা তথা নারীর চ্যালেঞ্জ সম্পর্কে সচেতন হওয়া দরকার। নারীর প্রতি সংবেদনশীল ও শ্রদ্ধাশীল হওয়া দরকার। এজন্যে নারী সম্পর্কে বিদ্যমান ভ্রান্ত ধারণা ও কুসংস্কার এবং নারীর প্রতি বৈষম্য ও সহিংসতার বিরুদ্ধে সবাইকে উদ্যোগী হতে হবে।
মনে রাখা দরকার, সমাজকে যদি নারীর জন্যে অকল্যাণকর করে রাখা হয়, তাহলে আদতে তা পুরুষের পক্ষেও খুব কল্যাণকর হয় না।
[লেখাটি ৮ সেপ্টেম্বর ২০১৯ নিউজরুম ডটকম ডটবিডি-তে প্রকাশিত হয়।]