By আফছানা খান নিশা
নারীদের ‘মানুষ’ ভাবা হবে কবে?
Media School January 20, 2021
নারী-পুরুষের সমান অধিকারের কথা বলা হলেও সমাজের একটি বড় অংশের মানুষের ধ্যান-ধারণায় এখনো নারীর প্রতি বৈষম্যের ছাপ দৃশ্যমান। মেয়েদের শিক্ষিত করে তোলার ব্যাপারে অভিভাবকের উদাসীনতা রয়েছে। অনেকে মনে করেন, বিয়ে দিতে হবে, তাহলে পড়িয়ে কী লাভ। একটি মেয়ে মাধ্যমিক বা উচ্চমাধ্যমিক পর্যায়ের পড়ালেখা শেষের আগেই বিয়ে নিয়ে ব্যস্ততা শুরু হয় অনেক পরিবারে। অপরদিকে ছেলেদের ক্ষেত্রে চিত্রপট একবারেই উল্টো। ভালো প্রতিষ্ঠান থেকে উচ্চশিক্ষা গ্রহণ, সমাজের সঙ্গে তাল মেলানোর সুযোগ - সবটাই দেওয়া হয় পরিবার থেকে। মনে করা হয়, বাবা-মাকে শেষ বয়সে ছেলেই তো দেখবে!
'তুমি আমাকে শিক্ষিত মা দাও, আমি তোমাকে শিক্ষিত জাতি দেব' - নেপোলিয়ন বোনাপার্টের এই উক্তি দিয়েই বোঝা যায়, নারীশিক্ষা কতখানি গুরুত্বপূর্ণ।
একটি উদাহরণ দিয়ে বলা যাক। পাত্রী দেখতে আসা ছেলেপক্ষের লোকজনের প্রথম চাহিদা কম বয়সের মেয়ে। বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়া মেয়েরা ভালো নয় এবংবয়স্ক - অনেক শিক্ষিত মানুষও এই ধারণা পোষণ করেন। এক ছেলেকে বলতে শুনেছি, 'বিয়ের ক্ষেত্রে মেয়েদের দেখে রূপ আর ছেলেদের দেখে অর্থবিত্ত।'
একটি সন্তান ভূমিষ্ঠ হওয়ার আগেই প্রশ্ন- মেয়ে নাকি ছেলে হবে? ছেলে হলে কথাই নেই, যত বিপত্তি মেয়ে হলে। কারণ ছেলে বংশের প্রদীপ হিসেবে চিহ্নিত আর মেয়েরা 'অন্যের ঘরের আমানত' বলে বিবেচিত।
পরিবারে খাবারের ক্ষেত্রেও রয়েছে বৈষম্য। খেতে বসলে ছেলের জন্য মাংসের ভালো টুকরোটা আর মেয়েকে কিছু একটা দিলেই হয়। ছেলের বাইরে চলাফেরায় বাধা নেই, তবে মেয়ের বেলায় তা পাহাড়সম সমস্যা কারণ 'লোকে কী বলবে'?
'যে রাঁধে, সে চুলও বাঁধে' - কথাটি যেন শুধুই মুখের বুলি। পরিবার থেকেই মেয়েদের দুর্বল হিসেবে ভাবতে অভ্যস্ত করা হয়। ছোট থেকে বড় হওয়া পর্যন্ত নিজেকে দুর্বল ভেবে গড়ে ওঠা মেয়ের কাছ থেকে বিশেষ কী-ই বা আশা করা যেতে পারে! এ দেশের প্রধানমন্ত্রী নারী কিন্তু ঘরের নারীটি কেন দাসী? দেশ উন্নত আর আধুনিক হয়েছে বটে কিন্তু দেশের মানুষের মনের সংস্কার হয়নি এখনো।
একটি মেয়ের বিয়ে কত ভালো পরিবারে হবে, সেই হিসেবে সমাজে তাকে সম্মান এবং স্থান দেওয়া হয়। এক্ষেত্রে স্বামীর যোগ্যতা দিয়ে মেয়েকে বিচার করা হয়, মেয়ের যোগ্যতা এখানে নগণ্য। বাবার বাড়ি বা স্বামীর বাড়ির ঠিকানা ছাড়া সমাজে মেয়েদের নিজের কোনো ঠিকানা হয় না। এখনো নানাভাবেই নারী অবহেলিত রয়েই গেছে।
স্বাধীনতার প্রায় অর্ধশত বছর পার হয়ে গেলেও নারীরা পুরোপুরি স্বাধীনতা পায়নি আজও। এসব কিছুর মূল কারণ প্রকৃত শিক্ষার অভাব, সামাজিক অবক্ষয় এবং ধর্মীয় শিক্ষার অপপ্রয়োগ। এজন্য মানসিকতার পরিবর্তন দরকার। শুধু ছেলেই মা-বাবাকে দেখবে এমন নয়, মেয়েরাও শিক্ষিত হয়ে আত্মনির্ভরশীল হতে পারে, দায়িত্ব নিতে পারে বাবা-মার। নারী মানেই দুর্বল নয়। চিন্তা-চেতনার পরিবর্তন হলেই নারীর অবস্থান পাল্টে দেওয়া সম্ভব।