Media School

Dhaka    Saturday, 23 November 2024

By সজীব সরকার

নারকোটাইজিং ডিসফাংশন (Narcotizing Dysfunction)

Media School September 27, 2020

নির্বিচার তথ্য প্রবাহ বরং দরকারি বিষয়ে মানুষের আগ্রহ কমিয়ে দেয়। ছবি : xufangan.wordpress

গণমাধ্যমের মূল কাজ হলো মানুষকে তথ্য সরবরাহ করা। তবে অনেক সময় দেখা যায়, কোনো একটি বিষয়ে গণমাধ্যমগুলো মানুষের ধারণক্ষমতার বেশি তথ্য দিতে থাকে। এর ফলে ওই বিষয়ে মানুষ প্রথম দিকে খুব উৎসাহী থাকলেও তথ্যের চাপে ক্রমেই ওই বিষয়ে আগ্রহ হারাতে শুরু করে। কোনো বিষয়ে অতিরিক্ত তথ্য প্রবাহের কারণে ওই বিষয়ে উদ্যোগী না হয়ে বরং এই আগ্রহ হারিয়ে ফেলাকেই নারকোটাইজিং ডিসফাংশন বলা হয়।

উদাহরণ হিসেবে বলা যেতে পারে : বন্যার মতো দুর্যোগের সময় গণমাধ্যমগুলো নিজেদের মধ্যে নির্বিচারে প্রতিযোগিতায় লিপ্ত হয়। এর ফলে প্রত্যেকটি গণমাধ্যম অন্যের চেয়ে বেশি খবর দেওয়ার চেষ্টা করে। এভাবে সারা দিন কেবল বন্যার খবর পেতে পেতে মানুষ এই বিষয়ে সংবেদনশীলতা ও আগ্রহ হারায়। ফলে বন্যায় ক্ষতিগ্রস্তদের ত্রাণ ও পুনর্বাসনের উদ্যোগের বদলে মানুষের দুর্ভোগ এবং দায়িত্বশীলদের দুর্নীতির খবর নিয়ে আলোচনা-সমালোচনাতেই পাঠকদের কর্মকাণ্ড সীমাবদ্ধ হয়ে পড়ে। আর এ বিষয়ে একের পর এক খবর (এমনকি পুরোনো খবরই বার বার) পেতে পেতে এক সময় এই বিষয়ে আগ্রহ হারায় এবং এ নিয়ে পাঠকরা আর মনোযোগী হয় না। করোনাভাইরাসের প্রাদুর্ভাব ঘটার পরও দেখা গেছে, এই তথ্যই বার বার প্রচার করা হয়েছে। খবর, ব্রেকিং নিউজ, টকশো, মতামত, সাক্ষাতকার, লাইভ এমনকি বিজ্ঞাপনেও করোনা ইস্যু যুক্ত হয়ে গেছে - যা কোভিড-১৯ বিষয়ে মানুষের জানার প্রয়োজন বা আগ্রহের তুলনায় অনেক গুণ বেশি। ফলে করোনাভাইরাসের বিষয়ে তথ্য জানতে শুরুতে মানুষ পত্রিকা বা রেডিও-টিভির সামনে যতোটা আগ্রহ নিয়ে বসে থাকতো, এখন আর সেই চিত্র নেই; এখন মানুষ আর আগের মতো এই বিষয় নিয়ে জানতে আগ্রহী বা মনোযোগী নয়।

এখানে লক্ষ করার বিষয় হলো, গণমাধ্যমের এই ভূমিকাকে ‘ফাংশন’ (কর্ম বা উদ্যোগ) না বলে বরং ‘ডিসফাংশন’ (কর্মহীনতা বা উদ্যোগহীনতা কিংবা কর্ম বা উদ্যোগের অনুপস্থিতি) হিসেবে চিহ্নিত করা হয়েছে (narcotize rather than to energize)। এর কারণ হলো, এখানে তথ্য মানুষকে উদ্যমী বা উদ্যোগী না করে বরং এর উল্টোটি করছে অর্থাৎ নির্বিচারে তথ্য দিতে দিতে কোনো বিষয়ে মানুষের জানার বা কোনো সমস্যার সমাধানে উদ্যোগ নেওয়ার আগ্রহকে নষ্ট করে দিচ্ছে। আর মাদক বা এ ধরনের ওষুধ মানুষের শরীর-মনকে যেভাবে স্তিমিত বা অবসাদগ্রস্ত করে দেয়, কোনো বিষয়ে অতিরিক্ত তথ্যও একইভাবে মানুষকে ওই নির্দিষ্ট বিষয়ের প্রতি অসংবেদনশীল করে তোলে। তাই এই প্রক্রিয়াটিকে এখানে নারকোটাইজিং ডিসফাংশন বলা হয়েছে।

গণমাধ্যমের এই নেতিবাচক ভূমিকাকে তাত্ত্বিক Paul F. Lazarsfeld এবং Robert K. Merton ১৯৪৮ সালে তাদের লেখা "Mass Communication, Popular Taste and Organized Social Action" শীর্ষক প্রবন্ধে প্রথম নারকোটাইজিং ডিসফাংশন হিসেবে উল্লেখ করেন।