By সজীব সরকার
‘ঢাকা নিউজ’ : বাংলাদেশের দ্বিতীয় ও ঢাকার প্রথম সংবাদপত্র
Media School June 28, 2020
ঢাকা নিউজ-এর ১০ মে ১৮৫৬ সংখ্যা। ঐতিহাসিকদের মতে, এটিই পরে `বেঙ্গল টাইমস` হিসেবে আত্মপ্রকাশ করে।
১৮৫৬ সালের ১৮ এপ্রিল ‘ঢাকা নিউজ’ নামের একটি ইংরেজি সাপ্তাহিক প্রকাশিত হয়। এটি হলো বর্তমান বাংলাদেশের দ্বিতীয় কিন্তু ঢাকা থেকে প্রকাশিত প্রথম সংবাদপত্র। এটি পূর্ববাংলা থেকে প্রকাশিত প্রথম ইংরেজি সাময়িকীও বটে। পত্রিকাটি প্রতি শনিবার প্রকাশিত হতো। শুরুতে পত্রিকাটির কলেবর ছিলো এক পৃষ্ঠা। ১৩তম সংখ্যা থেকে এটি চার পৃষ্ঠায় ছাপা হতে থাকে। পরে এতে এক পাতার সাপ্লিমেন্ট বা ক্রোড়পত্রও যোগ হয়, যেখানে বাজারদর প্রকাশিত হতো। এর প্রতি কপির দাম ছিলো দুই আনা। আর বাৎসরিক চাঁদার হার ছিলো আড়াই টাকা।
ঢাকা নিউজ প্রকাশিত হতো পাঁচজনের (এএম ক্যামারন, এলপি পোগজ, জেএ গ্রেগ, জেপি ওয়াইজ ও কেএ গনি) মালিকানাধীন ‘ঢাকা প্রেস’ থেকে। পত্রিকাটির সম্পাদক ছিলেন আলেকজান্ডার ফোর্বস।
যতোদূর জানা যায়, বাংলাদেশে আসার আগে থেকেই ফোর্বস সাংবাদিকতার সঙ্গে সম্পৃক্ত ছিলেন। ১৮৪২ সালে তিনি প্রিন্স দ্বারকানাথ ঠাকুরের সঙ্গে বাংলাদেশে আসেন। প্রথমে তিনি দ্বারকানাথ ঠাকুরের রেশনের কুঠিতে কাজ করতেন। ঢাকা নিউজ প্রকাশের প্রাক্কালে তিনি ঢাকা ব্যাংকের সচিব ছিলেন।
মানের বিচারে ঢাকা নিউজ ব্রিটিশ-শাসিত ভারতবর্ষের অন্যসব অঞ্চল থেকে প্রকাশিত মানসম্পন্ন পত্রিকাগুলোর সঙ্গে তুলনীয় ছিলো। এ পত্রিকাতেও প্রায়ই তখনকার শাসন-রাজনীতি বিষয়ে বিভিন্ন লেখায় বিদ্রূপের ছাপ বেশ চমৎকারভাবে দেখা যেতো। যেমন : ১৮৫৭ সালের ১ আগস্ট পত্রিকাটিতে ‘The Tenure of Land by Europeans in India’ শিরোনামের একটি নিবন্ধ ছাপা হওয়ার পর ঢাকা নিউজকে সতর্ক করে দেয়া হয়। সতর্কীকরণ নোটিস পাওয়ার পর ১৫ আগস্ট পত্রিকাটির সম্পাদকীয়তে লেখা হয় :
“...so, since receipt of letters beneath, we have been imagining pages of history, which by future historians will be devoted to ourselves alone... The obnoxious editor of the first paper in India with regard to circulation having been forced to quit the country, and the paper having become milk and water in consequence, the whole force of the Government was next turned to crushing the most talented periodical of the day, which was published at Dacca, in a remote corner of the Empire, and which, though comperatively little known, nevertheless exercised a tremendous influence upon the well-being of the state. After a terrific struggle the editor was disarmed, and British India saved.”
ঢাকা নিউজ-এর লেখায় এ ধরনের বিদ্রূপ প্রায়ই দেখা যেতো। এমনকি উপর্যুক্ত ঘটনাটি নিয়েও “Jottings from our notebook” শীর্ষক ফিচারে প্রায়ই সরস মন্তব্য করা হতো। যেমন একবার এতে লেখা হয় :
“Having been permitted by our gracious master the Sultan Fredokallidad (nick name of the Lieutenant Governor coined by the paper) to live for another week, we venture to resume our ‘Jottings’ hoping that they may be found so interesting by his majesty, that the royal favour may be extended to us still further so that we may enjoy another week’s existence.”
সাংবাদিকতার মানদণ্ডে তেমন নান্দনিক না হলেও বিশেষ করে ক্যানিং প্রবর্তিত ‘পনেরো আইনের’ সময়ে এ ধরনের তীর্যক লেখা নিঃসন্দেহে সাহসিকতার পরিচয়। তবে নথিপত্রে এই বিষয়টি একটু অন্যভাবে পাওয়া যায়; জানা যায়, পত্রিকাটির পৃষ্ঠপোষকরা ছিলেন নীলকর ও বাংলাদেশে নীলচাষ বিস্তারের পক্ষে অবস্থানকারী। তাই বিষয়টিকে এমনভাবে ব্যাখ্যা করা হয়েছে যে, নীলচাষ বিস্তারের পক্ষে কাজ করার মাধ্যমে যারা আসলে কোম্পানি শাসনের স্বার্থেই ভূমিকা রাখছে, তাদের এমন দু-একটি ভুল বা অপরাধ কোম্পানি সস্নেহে ক্ষমা করবে - এতে খুব বেশি বিস্মিত হওয়ার কিছু নেই।
প্রথম প্রকাশের ১৩ বছর পর ১৮৬৯ সালে পত্রিকাটির প্রকাশনা বন্ধ হয়ে যায়। তবে ঐতিহাসিক ডব্লিউ ডব্লিউ হান্টারের মতে, এটিই পরে ‘বেঙ্গল টাইমস’ নামে প্রকাশিত হতে থাকে।
তথ্যসূত্র :
Wolseley, Roland E.: Journalism in Modern India.
Mehta, D. S.: Mass Communication and Journalism in India.
মামুন, মুনতাসীর (১৯৯৩) : ঢাকা স্মৃতি বিস্মৃতির নগরী।
বাংলাপিডিয়া।
ধর, সুব্রত শংকর (১৯৮৬) : বাংলাদেশের সংবাদপত্র।
পাল, তারাপদ : ভারতের সংবাদপত্র।