By সাবিকুন নাহার
কখনো মনে হয়নি আমি পারবো না
Media School October 25, 2020
আমি একজন নারী, যেটা জন্মের পর আমার পরিবার আর আমার সমাজ আমাকে শনাক্ত করে দিয়েছে। এখন আমি নিজেও অনুধাবন করি, হ্যাঁ, আমি নারী - যখন শুনতে হয় তোমার এটা করা মানা, তোমার জোরে চলা মানা, তোমার জোরে হাঁটা মানা। শুধু একটা-দুটো না, হাজারো মানা আমাকে শুনতে হয়, কারণ আমি নারী। যদি আমি পুরুষ হতাম, তাহলে হয়তো আমাকে এত মানা শুনতে হতো না। কিন্তু আমার এই লিখতে পারা, আমার নিজের মতামত উপস্থাপন করতে পারাটাই একটা বড় প্রমাণ- নারী হলেও আমি পারি।
ছোটবেলায় যখন মা-বাবাকে হারাই, তখন আত্মীয়-স্বজন, পাড়া-প্রতিবেশীরা আমার নানিকে বলেছিল, 'মেয়ে আইনা বরং ঝামেলা, ওরে বড় করবেন একটা খরচ, আবার বিয়ে দিবেন তাও খরচ; এর থেকে ভালো ওরে কোনো এতিমখানায় দিয়ে দেন।' কিন্তু আমার নানি আমাকে ফেলতে পারেননি মায়ার কারণে। আমার নানি আমাকে কখনো কোনোকিছুতেই বাধা দেননি কিন্তু প্রতিবেশীরা সবসময় আমাকে মনে করিয়ে দিত, আমার মা-বাবা নেই। এই কথাটা যে কতটা কষ্টের, তা ভাষায় প্রকাশ করা সম্ভব না।
যখন ক্লাস সেভেনে পড়ি, আমি আর আমার ছোট মামা একসাথে সাইকেল চালানো শিখবো বলে সিদ্ধান্ত নেই। আমি সাইকেল থেকে হঠাৎ করেই পড়ে যাই, খুব ব্যথা পাই। তখন প্রতিবেশীরা বলেছিল, 'মাইয়া মানুষ, ব্যাটা সাজতে মন চায়।' আমার মামাও বলেছিল, 'তুই মেয়ে, তোর শিখার দরকার নাই।' আমি ছেলে না মেয়ে, সেটা আমার মাথায় তখন ছিল না; আমি শুধু এটাই মাথায় রেখেছিলাম, আমাকে পারতেই হবে। যখন আমার মামা প্যাডেলটাও ঠিকমতো ধরতে শিখেনি, আমি তখন সবার সামনে দিয়ে সাইকেল চালিয়ে অনেক দূর চলে যেতে পেরেছি।
স্কুলজীবনে প্রতিযোগিতায় ৬০-৭০ জন ছেলের সাথে প্রতিদ্বন্দ্বী হয়ে পরীক্ষায় আমি প্রথম হয়েছিলাম। আজ অনার্স শেষ পর্যায়ে; বাড়ি থেকে অনেক দূরে এসে হোস্টেলে থেকে পড়াশোনা করছি, জ্ঞান অর্জন করার চেষ্টা করছি। এগুলোই আমার প্রমাণ, নারী হলেও আমি পারি। আমার কখনো মনে হয়নি, আমি পারবো না অথবা আমাকে দিয়ে হবে না। এই প্রতিকূল সমাজে যেখানে নারী সর্বদা ভোগ্যপণ্য হিসবে ব্যবহৃত হয়, সেই সমাজে যুদ্ধ করে টিকে আছি। নিজেকে আমি ওই পর্যায়ে নিয়ে যেতে চাই, যেখানে আমাকে দেখে অন্য মেয়েরাও অনুপ্রাণিত হবে।