Media School

Dhaka    Thursday, 21 November 2024

By সায়মা রহমান এশা

একজন নারী পুরুষের সমান কর্মক্ষম

Media School October 26, 2020

একটা সময় ছিলো, যখন নারীকে ঘরের উপকরণের মতো ব্যবহার করা হতো। উনিশ শতকের আগে নারী মানেই কল্পনায় ফুটে উঠতো অসহায়, বঞ্চিত, সব অন্যায় মুখ বুঁজে সয়ে নিয়ে নিয়তিকে মেনে নেওয়া প্রতিবিম্ব। প্রথমে মায়ের কাছে কাজের হাতেখড়ি, তারপর বিয়ের পর স্বামীর সংসারে স্বামী, সন্তান সব নিয়ে মুখ বুঁজে জীবন পার করে দেয়াই ছিলো একজন নারীর জীবন, যার চিন্তার গণ্ডি শুধু চার দেয়ালের মাঝেই সীমাবদ্ধ। যে চিন্তা করবে, এই বেলার পরের বেলায় কী রান্না করবে, বৃষ্টি আসার আগে জামাকাপড় সব ঘরে নিয়ে আসতে হবে, এবার আমের আচার না দিলে ছেলেটা মন খারাপ করবে ইত্যাদি। পরিবারের ছেলেরা যখন কাজের আলোচনা করতো, বউ বা মেয়ের কাজ হচ্ছে চা-নাস্তা সময় মতো দেয়া। নারীর কাছ থেকে কোনো পরামর্শ গ্রহণযোগ্য ছিলো না। থাকবেই বা কেন? ঘরে সামান্য পড়াশোনার হাতেখড়ি, এর বেশি কোনোভাবেই না। "মেয়েমানুষ এত পড়ে কী হবে? সেইতো ঘর-সংসারই করতে হবে" - এমন একটা চিন্তা-ভাবনা তখনকার সমাজে প্রতিষ্ঠিত ছিলো। অথচ একটি সমাজ ঠিক তখন উন্নত ও কার্যকর হতে পারে, যখন তাতে বসবাসকারী নারী ও পুরুষ উভয়েই সমান গুরুত্ব পাবে।

উনিশ শতকের আগের সমাজে নারী ছিলো বঞ্চিত আর উপেক্ষিত। কিন্তু সময়ের সাথে মানুষের চিন্তাধারা বদলায়। একজন শিক্ষিত নারী ঠিক ততোটাই কর্মক্ষম, যতোটা একজন পুরুষ। অপ্রাপ্তবয়স্ক থেকে প্রাপ্তবয়স্ক হওয়া পর্যন্ত একজন নারীকে অনেকগুলো ধাপ পার করতে হয় : কন্যা, বোন, স্ত্রী, মা - এই পর্যায়ক্রমিক ধাপগুলোতে একজন নারীকে অর্জন করতে হয় ধৈর্য্য, সাহসিকতা, দৃঢ় মনোবল, দায়িত্বজ্ঞান, আনুগত্য, স্নেহ, মায়া, ভালোবাসা, সংসার সামলানোর গুণ ইত্যাদি নানাবিধ দক্ষতা। একজন নারী যদি এতকিছু করতে পারে, এত দায়িত্ব পালন করতে পারে, তাহলে চাইলেই সে তার স্বপ্ন পূরণের জন্য সর্বোচ্চ চেষ্টা করতে পারে এবং সফলতার চূড়ান্ত শিখরে আরোহন করতে পারে।

সমাজে নারীকে অবহেলা করা হয়। কিন্তু নারী দমে থাকেনি। নারীরা বর্তমানে পাইলট, সেনাবাহিনীর কর্মকর্তা, ব্যবসায়ী বা সফল উদ্যোক্তা, পর্বতারোহী, শিক্ষক, চিকিৎসক, প্রকৌশলী, সরকারি কর্মকর্তা এমনকি দেশের সরকারপ্রধান পর্যন্ত নারী। যেখানে পরিবারের সিদ্ধান্ত নেওয়ার ক্ষেত্রেও নারীকে তুচ্ছ জ্ঞান করে অবজ্ঞা করা হতো, সেখানে একজন নারী আজ দেশ পরিচালনা করছেন এবং দেশের হয়ে সিদ্ধান্ত নিচ্ছেন। প্রত্যন্ত গ্রামের সাদা-সিধে মেয়েটিও পড়াশোনা করে বিসিএস ক্যাডার হচ্ছে।

নিজ লক্ষ্যের প্রতি অটল থাকার কারণে নারীরা আজ সব প্রতিকূলতাকে জয় করছে। এতসব বাধা-বিপত্তি পেরিয়ে যে সফল হতে পারে, নিজেকে প্রমাণ করতে পারে, সেই নারীকে যদি তার অধিকার এবং পর্যাপ্ত সহযোগিতা দেওয়া হয় তাহলে সে নিজের জন্য ও দেশের জন্য মূল্যবান সম্পদ হয়ে উঠতে পারে।