By সজীব সরকার
অ্যাকটিভ লিসেনিংয়ের জন্য দরকারি বাচনিক ও অবাচনিক দক্ষতা
Media School January 30, 2025
প্রতীকী ছবি।
অ্যাকটিভ লিসেনিংয়ে নানা ধরনের দক্ষতা দরকার। এ আলোচনায় দুটি প্রেক্ষাপটে সেগুলো ব্যাখ্যা করা হলো।
মানুষ সাধারণত ২টি উপায়ে যোগাযোগ করে :
১. বাচনিক (verbal): মুখের ভাষা অর্থাৎ যেসব শব্দ বা বাক্য উচ্চারণ করা হয়; এবং
২. অবাচনিক (non-verbal): শারীরিক ভাষা (body language) অর্থাৎ মুখ, চোখ বা হাত-পায়ের ইশারা বা নানা রকমের অঙ্গভঙ্গি।
নানা গবেষণায় প্রমাণ মিলেছে, মানুষ সারাদিনে যতো যোগাযোগ করে, এর মধ্যে অবাচনিক ভাষার ব্যবহার সবচেয়ে বেশি থাকে। তাহলে, যোগাযোগের সময় কারো শুধু মুখের ভাষার প্রতি মনোযোগ দিলেই হবে না; তার শারীরিক ভাষা অর্থাৎ অবাচনিক ইঙ্গিতগুলোর দিকেও যথেষ্ট মনোযোগ দিতে হবে।
মানুষ মুখে যা বলে, সেটিকেই আরো জোরালো বা স্পষ্ট করতে শারীরিক ভঙ্গিগুলো ব্যবহার করে। এসব ইঙ্গিত থেকে অনেক সময় বোঝা যায়, বক্তা কোন কথাটায় বেশি গুরুত্ব দিচ্ছে, অথবা, কোন বিষয়টি সে নিজেও স্পষ্টভাবে জানে না, বা কোন কথাটি সে না জেনে কিংবা মিথ্যা বলছে। তাই, অ্যাকটিভ লিসেনার হতে বাচনিক ও অবাচনিক - এ দুই ধরনের বার্তার দিকেই মনোযোগী হতে হবে।
বাচনিক যোগাযোগের ক্ষেত্রে যেসব বিষয় মনে রাখতে হবে :
১. বক্তার কথা থেকে যা বুঝেছেন, তাকে সেটি অল্প কথায় বুঝিয়ে বলুন। এতে দুজনই নিশ্চিত হতে পারবেন, বক্তার কথাগুলো আপনি ঠিকমতো বুঝলেন কি না।
২. প্রয়োজনমতো ওপেন-এন্ডেড (open-ended) প্রশ্ন করুন। অর্থাৎ, শুধু হ্যাঁ/না বা এমন সুনির্দিষ্ট উত্তরে বলার বাধ্যবাধকতা রাখবেন না। মাঝে-মধ্যে এমন প্রশ্ন করুন, যেখানে বক্তা আরো খোলামেলা ও বিস্তারিতভাবে নিজের কথাগুলো আপনার কাছে তুলে ধরতে পারে।
৩. প্রয়োজন হলে অনুসন্ধানী (probing) প্রশ্ন করুন। অর্থাৎ, নির্দিষ্ট কোনো তথ্য বা ধারণা জানার প্রয়োজন হলে সুনির্দিষ্টভাবে এমন প্রশ্ন করুন, যার মাধ্যমে আপনার যা জানা দরকার, সেটি বেরিয়ে আসবে।
৪. ছোট ছোট বাচনিক ইঙ্গিত দিন। যেমন : বুঝতে পেরেছি, আচ্ছা, ঠিক আছে, বুঝিনি, আবার একবার বলবেন - ইত্যাদি। সবসময় লম্বা ফিডব্যাকের দরকার নেই; এতে আলোচনার গতি নষ্ট হতে পারে।
৫. সমানুভূতি (empathy) প্রকাশ করুন; বক্তাকে তা বুঝতে দিন। বক্তার কথা ও আবেগ-অনুভূতির সঙ্গে মিল রেখে আপনার অনুভুতিগুলোও প্রয়োজনমতো প্রকাশ করুন। এতে শ্রোতার প্রতি বক্তার আন্তরিকতা, বিশ্বাস ও আস্থা বাড়বে।
৬. বক্তার আলোচনার সঙ্গে আপনার কোনো অভিজ্ঞতা বা এমন কোনো ঘটনা বা তথ্য জানা থাকলে এগুলো শেয়ার করুন। এতে বক্তার সঙ্গে শ্রোতার আবেগীয় যোগসূত্র মজবুত হয় ও সাযুজ্য বাড়ে। এতে দুজনের মধ্যে যোগাযোগ আরো সহজ ও সমৃদ্ধ হয়।
৭. বক্তার সঙ্গে পুরনো কোনো আলোচনার অভিজ্ঞতা থাকলে সেখান থেকে গুরুত্বপূর্ণ কোনো অংশ বা তথ্য স্মরণ করা চেষ্টা করুন। বর্তমান আলোচনার সঙ্গে সঙ্গতিপূর্ণ কোনো তথ্য মনে করতে পারলে সেটি উল্লেখ করুন। এতে বক্তা এটি বিশ্বাস করবেন যে আপনি তাকে যথেষ্ট গুরুত্ব দিচ্ছেন; তার কথাগুলো শুধু শুনছেনই না, মনেও রাখছেন। এভাবে বক্তা ও শ্রোতার মধ্যে আন্তরিকতা ও আস্থা বাড়বে যা যে-কোনো যোগাযোগ বা সম্পর্কের জন্যই গুরুত্বপূর্ণ।
অবাচনিক যোগাযোগের ক্ষেত্রে যেসব বিষয় মনে রাখতে হবে :
১. একেবারে অনড় বা স্থির অর্থাৎ শক্ত হয়ে না থেকে সামান্য নড়া-চড়া করুন। বক্তার কথা তথা বার্তার সঙ্গে সঙ্গতি রেখে মাথা নেড়ে সায় দিতে পারেন। সবসময় মুখে কথা বলা জরুরি নয়; মাঝে-মধ্যে মাথা নেড়েও নিজের অভিব্যক্তিগুলো প্রকাশ করতে পারেন। আবার, কথা বললেও এর পাশাপাশি মাথা নাড়তে পারেন। এতে যোগাযোগে বৈচিত্র্য আসে এবং অনেক ক্ষেত্রে অভিব্যক্তিগুলো জোরালো হয়।
২. হাসুন। বক্তা যখন ভালো কোনো খবর শেয়ার করে বা আনন্দিত থাকে, তার সঙ্গে আপনিও হেসে সঙ্গ দিন। এতে বক্তা ও শ্রোতার মধ্যে আন্তরিক ও স্বতঃস্ফূর্ত যোগাযোগের সুযোগ বাড়ে।
৩. যোগাযোগে ব্যাঘাত ঘটায়, এমন অঙ্গভঙ্গি (physical movement, gesture or posture) করা থেকে বিরত থাকুন। যেমন : কেউ কথা বলছে- তখন আপনি টেবিলে মাথা রেখে আধশোয়া হয়ে রইলেন - এটি মোটেও সমীচীন নয়। আবার ধরুন, বাসায় আপনার পরিবারের কোনো সদস্য আপনার সঙ্গে কথা বলছে, এমন সময় আপনি উল্টোদিকে মুখ ফিরিয়ে বসলেন অথবা মুখের সামনে ফোন বা বই ধরে রাখলেন - এমন আচরণ ঠিক নয়। কারো সঙ্গে কথাবার্তা হচ্ছে, এ সময় আপনি অকারণ টেবিলে বা চেয়ারে আঙুল দিয়ে ঠকঠক শব্দ করছেন - এ ধরনের আচরণ বা অঙ্গভঙ্গি বক্তার মনোযোগ বা কথা চালিয়ে যাওয়ার আগ্রহে বিঘ্ন ঘটায়।
৪. বক্তার চোখের দিকে তাকান। বাক্যালাপের সময় পরস্পরের চোখের দিকে তাকানো (eye contact) খুব জরুরি। এতে বক্তা ও শ্রোতার মধ্যে যোগাযোগ স্পষ্টতর ও আন্তরিক হয়। কথা বলা ও শোনার সময় চোখের দিকে তাকানো যোগাযোগে আত্মবিশ্বাসেরও নিদর্শন।
এমন আরো অনেক দিক রয়েছে, যেগুলোর দিকে মনোযোগী হলে এবং যথাযথভাবে ব্যবহার করলে যোগাযোগ প্রক্রিয়া সফলতর হতে পারে।