By সজীব সরকার
রূপান্তরকামিতা
Media School June 17, 2020
প্রতীকী ছবি
রূপান্তরকামিতা বা ট্রান্সসেক্সুয়ালিজম হলো বিশেষ একটি প্রবণতা, যেখানে সেক্স বা জৈব লিঙ্গ ব্যক্তির জেন্ডার বা সামাজিক/সাংস্কৃতিক লিঙ্গের সাথে প্রভেদ তৈরি করে। রূপান্তরকামী বা ট্রান্সসেক্সুয়াল ব্যক্তিরা এমন একটি যৌন পরিচয়ের অভিজ্ঞতা লাভ করেন, যা ঐতিহ্যগতভাবে তাদের নির্ধারিত যৌনতার সাথে সাযুজ্যপূর্ণ নয় এবং তারা নিজেদেরকে স্থায়ীভাবে সেই লিঙ্গে পরিবর্তিত করতে চান। রূপান্তরকামীরা ছেলে হয়ে (বাহ্যিক বৈশিষ্ট্যে) জন্মানো সত্বেও মন-মানসিকতায় নিজেদের নারী ভাবেন কিংবা কখনো আবার উল্টোটি ঘটে : নারী হিসেবে জন্মানোর পরও মানসিক জগতে থাকেন ‘পুরুষসুলভ’। এদের কেউ কেউ বিপরীত লিঙ্গের পোশাক পরেন; এই ব্যাপারটিকে বলা হয় (ট্রান্সভেস্টিজম বা ক্রসড্রেস)। আবার কেউ সেক্স রিঅ্যাসাইনমেন্ট সার্জারির মাধ্যমে রূপান্তরিত মানবে (ট্রান্সসেক্সুয়াল) পরিণত হন। তারা সবাই রূপান্তরিত লিঙ্গ নামক বৃহৎ রূপান্তরপ্রবণ (ট্রান্সজেন্ডার) সম্প্রদায়ের অংশ হিসেবে বিবেচিত হয়।
মানবসভ্যতায় বিভিন্ন সমাজব্যবস্থার লিখিত ইতিহাসের সমগ্র কাল জুড়ে রূপান্তরকামিতার উপস্থিতি পরিলক্ষিত হয়। বস্তুত জৈব বৈশিষ্ট্যের বলয় অতিক্রম করে সাংস্কৃতিক বলয়ে অন্তর্ভুক্ত হওয়ার বাসনার কারণেই মানবসমাজে রূপান্তরকামিতার অস্তিত্ব আছে বলে মনে করা হয়।
বিজ্ঞানীরা প্রাণিজগতেও রূপান্তরকামিতার উপস্থিতি লক্ষ করেছেন। উত্তর আমেরিকার সমুদ্র উপকূলে আটলান্টিক স্লিপার শেল নামে পরিচিত ক্রিপিডুলা ফরমিক্যাটা এবং ল্যাবারিডেস ডিমিডিয়াটাস, ইউরোপিয়ান ফ্লে অয়েস্টার ও অস্ট্রা এডুলিস প্রজাতির ঝিনুকের মধ্যে রূপান্তরকামিতা এবং লিঙ্গ পরিবর্তনের প্রমাণ পাওয়া গেছে। এ ছাড়া যৌনতার পরিবর্তন ঘটে মাছি, কেঁচো, মাকড়শা এবং জলজ ফ্লি ডাফনিয়াদের বিভিন্ন প্রজাতির মধ্যেও। সামুদ্রিক গ্রুপার মাছ প্রথমে স্ত্রী হিসেবে জন্মগ্রহণ করে ও পরিণত বয়সে এক বা একাধিকবার প্রজননে অংশ নেয়। এসব স্ত্রী মাছ পরে লিঙ্গ পরিবর্তন করে পুরুষ মাছে রূপান্তরিত হয় এবং পুরুষ মাছ হিসেবে প্রজননে সক্রিয়ভাবে অংশগ্রহণ করে। ক্লাউনফিশও রূপান্তরকামিতার অন্যতম উদাহরণ; জন্মগতভাবে সকল ক্লাউনফিশ পুরুষ, কিন্তু দলের সবচেয়ে বড় আকারের মাছটি নারী মাছে রূপান্তরিত হয়। ভেটকি বা কোরাল মাছও একইভাবে লিঙ্গ পরিবর্তন করে বলে বিজ্ঞানীদের মত।