Media School

Dhaka    Thursday, 26 December 2024

By সুলতানা আক্তার

নতুন রূপে প্রকৃতিকে সাজাবে ঋতুরাজ বসন্ত

Media School February 15, 2021

শীতের শুষ্কতায় প্রকৃতিকে সজীব করে তুলতে, মানুষের মনে সজীবতা এনে দিতে বসন্তের প্রয়োজন পড়ে।

নতুন কিছুর প্রত্যয়ে সামনে এগিয়ে যাওয়ার বার্তা নিয়ে বসন্তের উপস্থিতি। ফাগুনের মাতাল হাওয়া দোলা দিয়েছে বাংলার প্রকৃতিতে। নতুন রূপে প্রকৃতিকে সাজাবে ঋতুরাজ বসন্ত। ফুলেল বসন্ত, মধুময় বসন্ত, যৌবনের উদ্দামতা বয়ে আনার বসন্ত আর আনন্দ, উচ্ছ্বাস ও উদ্বেলতায় মন-প্রাণ কেড়ে নেওয়ার সময় এখন।

ফাগুনের আগুন যে মনে ধরেছে, তা প্রকৃতির চিত্রপটেই বোঝা যাচ্ছে। কবি সুভাষ মুখোপাধ্যায়ের ভাষায় : 'ফুল ফুটুক আর না ফুটুক, আজ বসন্ত।' তবে এবারো ফুল ফুটেছে। দখিনা হাওয়ার গুঞ্জরনও লেগেছে। প্রকৃতিতে ফাগুন হাওয়ার দোল লেগেছে। ফুল ফোটানোর পুলকিত সময় এই ফাগুন।

বসন্ত বাতাসে ফুলের সুবাসে মন আনচান করার দিন শুরু হয়েছে পহেলা ফাল্গুন থেকে।
 
ঋতু বাসন্তী রঙে সাজায় মনকে, মানুষকে করে আনমনা। ফুলে ফুলে সেজে উঠেছে প্রকৃতি। পলাশ আর শিমুল গাছে লেগেছে আগুন রঙের খেলা। প্রকৃতিতে মধুর বসন্তের সাজ। আর এ সাজে মন রাঙিয়ে গুনগুন করে অনেকে গেয়ে উঠবে আজ ফাগুনে আগুন লাগে...

বসন্ত ঠাঁই করে নিয়েছে সাহিত্যের প্রাচীন নিদর্শনেও, নানা অনুপ্রাস, উপমায়। বিশ্বকবি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর থেকে শুরু করে আধুনিককালের বাউল কবির মনকেও বার বার দুলিয়েছে ঋতুরাজ বসন্ত। যান্ত্রিকতার কোলাহলমুখর নগরে, অতি কর্মব্যস্ত জীবনে যতই নিষ্প্রাণ, হিসেবী, প্রকৃতি-বিচ্ছিন্ন হোন না কেন, বসন্তের এই দিনে তারা গেয়ে ওঠেন : 'বসন্ত বাতাসে সই গো, বসন্ত বাতাসে, বন্ধুর বাড়ির ফুলের গন্ধ আমার বাড়ি আসে...'। এসব অমর গান আমাদের মন গেয়ে উঠে বারবার।

আমাদের প্রকৃতিতে ও মনে বসন্তের আগমন প্রয়োজন। শীতের শুষ্কতায় প্রকৃতিকে সজীব করে তুলতে, মানুষের মনে সজীবতা এনে দিতে বসন্তের প্রয়োজন পড়ে। রবীন্দ্রনাথ বলেছেন, 'মধুর বসন্ত এসেছে, মধুর মিলন ঘটাতে।' প্রকৃতির সৌন্দর্য ও সজীবতার সঙ্গে নতুন দিনের প্রত্যাশা আসে । জীবনানন্দ দাশের কবিতায়ও বসন্তের ছোঁয়া লেগেছিলো : 'ঘুমে চোখ চায় না জড়াতে- বসন্তের রাতে'।

বাংলা ১৪০১ সাল থেকে বাংলাদেশে 'বসন্ত উৎসব' উদযাপন করার রীতি চালু হয়। রাজধানীতে বসন্ত শুরু হয় সকাল শুরু হওয়া মাত্রই; নানা অনুষ্ঠান, বর্ণাঢ্য শোভাযাত্রায় সকলে বরণ করে নেয় বসন্তকে। ফুলে এবং হলুদ ও বাসন্তী রঙের সাজ-পোশাকে নারী-পুরুষের উপস্থিতি জানান দেয় ফাল্গুনের প্রথম দিনটির।

তরুণীরা এই দিনের জন্য সারা বছর অপেক্ষা করে থাকে- কখন আসবে ফাগুনের এই দিন, যেদিন সবাই মিলে হৈ-হুল্লোড় করবে। নারীরা হলুদ আর বাসন্তী রঙের শাড়ি-জামা পরে নিজেদের সাজসজ্জায় রাঙিয়ে তুলে বিভিন্ন অনুষ্ঠানে যোগদান করে। বাইরে বেরুলেই মনে হয়, যেন প্রকৃতির বুকে ফাগুনের বাতাস বয়ে যাচ্ছে।

এবারও সেই কাঙ্ক্ষিত পহেলা ফাল্গুনে কিশোরী থেকে তরুণী সবাই ফুলের মালা হাতে আর চুলে জড়িয়ে ঘুরেছে চারদিক। দেখলেই মন জুড়িয়ে যায়। কোকিলের কুহুতান, দখিনা হাওয়া, ঝরা পাতার শব্দ, প্রকৃতির মিলন- সব এ বসন্তেই।

বসন্ত আমাদের জীবনে সত্যি হয়ে আসুক; অর্থবহ হয়ে উঠুক পলাশ-শিমুলের রঙ।