Media School

Dhaka    Sunday, 24 November 2024

By আহমেদ জাভেদ

চুক্তিমূলক ন্যায্যতা

Media School August 31, 2021

আহমেদ জাভেদ। ছবি : প্রথম আলো।

আমাদের দৈনন্দিন জীবনের অর্থনৈতিক সিদ্ধান্তগুলো কতোটা গুরুত্বপূর্ণ কিংবা অগুরুত্বপূর্ণ? এসব সিদ্ধান্তের ভিত্তি কী? এসব সিদ্ধান্ত কি ন্যায্যতার মানদণ্ডে গ্রহণযোগ্য? কিংবা, চুক্তির ন্যায্যতা পরিমাপের যৌক্তিক মানদণ্ডটিই বা কী? - একান্ত সাধারণ ও ঘরোয়া উদাহরণে এই বিষয়গুলোর ওপরই আলোকপাত করেছেন অর্থনৈতিক ভাষ্যকার আহমেদ জাভেদ।

তারিখটি ছিল ২৯ আগস্ট ২০২১। রবিবার সকাল। সকাল আটটা কি সাড়ে আটটা হবে। আসমা আপা বাসায় এলেন। আমি তখন বাসায় বসেই প্রাতিষ্ঠানিক কাজ করছিলাম। কোভিডের কারণে আমাদের অনেকেরই বাসাকেই কর্মস্থল বানাতে হয়েছে। নতুন পরিস্থিতির সঙ্গে খাপ খাওয়াতে এটি শিখতেও হয়েছে। আসমা আপা আমাকে কথা বলার জন্য শোয়ার রুমে আসতে বললেন। আমার স্ত্রীও কিছু আগেই উঠেছে। আমরা সাধারণত রাতে সাড়ে দশটার ভেতরেই শুয়ে পড়ি। সকালে পাঁচটা কি সাড়ে পাঁচটা নাগাদ উঠে পড়ি। আসমা আপা এসেছেন বাসার কাজের জন্য নতুন চুক্তি করতে, যেটি শুরু হবে পহেলা সেপ্টেম্বর থেকে। আসমা আপাকে আমরা আগে থেকে চিনতাম না। তাকে এনে দিয়েছেন আমাদের দীর্ঘদিনের পরিচিত সাহিদার মা। তিনি আমাদের বাসার কাছের প্রতিষ্ঠান জি-মার্টে কাজ করেন। আসমা আপার সঙ্গে পরিচয় গত ২০ আগস্টে। তিনি পরীক্ষামূলকভাবে দশদিনের জন্য আমাদের বাসার কিছু গৃহস্থালি কাজের জন্য এক হাজার দুইশত টাকায় চুক্তি করেন। সেই চুক্তির মেয়াদ শেষ হতে আর মাত্র দুই দিন বাকি। তাহলে ভবিষ্যতে অর্থাৎ আগামী মাস থেকে কী হবে? সেজন্যই তিনি আমার ও আমার স্ত্রীর সঙ্গে আলোচনায় বসেছেন।

কোভিড-পূর্ব সময়ে ও কোভিড সময়ে আমাদের বাসায় গৃহস্থালি কাজের জন্য সুদূর নেত্রকোণা থেকে তামান্নার মাকে এনে দিয়েছিলেন এই সাহিদার মা। তামান্নার মায়ের মূল নাম হাসেনা খাতুন। কিন্তু এ নাম বললে তিনি স্বস্তি বোধ করেন না, লজ্জা পান, তাই আমরাও তাকে তামান্নার মা-ই বলি। তিনি আমাদের বাসায় দুই বছর ছিলেন। প্রতি বছর তাঁর পছন্দমতো কোন একটি ঈদে এক মাসের জন্য বাড়ি যাবেন, এটিই ছিল তাঁর দাবি। আমরাও সানন্দে সেটি মেনে নিয়েছিলাম। তাঁর সেই ছুটিতে বাড়িতে ফিরে যাওয়ার আগে তাঁকে ও তাঁর গ্রামে থাকা তিন ছেলেমেয়েদের জন্য আমার স্ত্রী ঈদের সুন্দর জামাকাপড় ও উপহার সামগ্রী কিনে দিতেন। সুতরাং তামান্নার মা ছিলেন আমাদের বাসার গৃহস্থালি কাজের জন্য স্থায়ী চুক্তির (প্রচলিত ভাষায় বাঁধা-কাজে) সহায়তাকারি; মাসিক পাঁচ হাজার টাকা বেতনে কাজ করবেন। তিনি শুরুতেই বলে দিয়েছিলেন যে তিনি মোটমাট দুই বছরই থাকবেন আমাদের বাসায়, এর বেশি নয়। তাঁকে বিনামূল্যে থাকা-খাওয়া, অসুখ হলে চিকিৎসা ও বাড়িতে যোগাযোগের জন্য ফোন দিতে হবে। এগুলো সবই একেবারে মৌলিক বিষয়, এতে আমরা কেন, কেউই রাজি না হয়ে পারবে না। আমি ও আমার স্ত্রী সানন্দে এতে রাজি হয়েছি। কিন্তু তামান্নার মায়ের দুই বছর শেষ হয়েছে গত মাসে, কোরবানির ঈদে। ঈদের দিনই তিনি রাতে এই এলাকায় নেত্রকোণা থেকে আগত কিছু মানুষের সঙ্গে তিনি একটি মাইক্রোবাস ভাড়া করে চলে গেছেন। একটি তাড়া তখন ছিল যে, ঈদের একদিন বাদেই সরকার আবার কঠোর লকডাউন ঘোষণা করেছে, ফলে তড়িৎ ফিরে না গেলে তাঁকে আটকা পড়তে হবে।

তখন অবশ্য বুঝিনি যে, তামান্নার মা একজন নারী উদ্যোক্তা হবেন- এমন সংকল্পে ঢাকায় তিনি ব্যবসার প্রাথমিক পুঁজি সংগ্রহে এসছেন। কারণ, গ্রামে তিনি যে অবস্থায় আছেন সেখানে তাঁর পক্ষে এই প্রাথমিক সম্পদ সংগ্রহ করা সম্ভব নয়। আর কে না জানে যে, ঢাকায় আয়ের সুযোগ বেশি ও অসংগঠিত কর্মক্ষেত্রে কাজের সুযোগ রয়েছে, যদিও নিরাপত্তা ও অন্যান্য নাগরিক অধিকারের প্রাপ্যতা নিশ্চিত নয়। সেজন্যই তারা দেশের বাড়ির পরিচিতি সূত্র ও সম্পর্ককে কাজে লাগিয়ে শহরে এসে পুঁজি সংগ্রহ করেন ও নিজেদের জীবন মানের উন্নয়ন ঘটান। তামান্নার মা আমাদের বাসায় কাজের পরিশ্রমিক হিসেবে দুই বছরে পেয়েছেন এক লাখ বিশ হাজার টাকা যেগুলো তিনি কিছু মাস পরপরই গ্রামে বিকাশে পাঠিয়ে উর্বর জমি বর্গা চাষের চুক্তি করে বাড়তি আয়ের ব্যবস্থা নিশ্চিত করেছেন। এ কাজে তিনি স্বামীকে বেশি ভরসা করেন না বিধায় তার ভাইয়ের সহায়তা নিয়েছেন।

তামান্নার মায়ের রেশ অবশ্য আমাদের বাসা থেকে এখনও যায়নি। আমরা তো তাঁর একবারে গুণমুগ্ধ ছিলামই, এর চেয়েও বড় কথা ছিল, তাঁর সঙ্গে আমাদের ছোট্ট দুটি সন্তানের সম্পর্ক ছিল অতুলনীয়। তারা তামান্নার মকে খালাদাদু বলে ডাকতো। আমাদের সন্তানদের ভাষায় খালাদাদুর হতে মাখানো ভাত পৃথিবী সেরা। খালাদাদু তাদেরকে তাঁর নেত্রকোণার বাড়ির গল্প করতো আর এই শুনে আমাদের বাচ্চাদের মধ্যে গ্রামের পরিবেশ নিজেদের চোখে দেখার আগ্রহের কথা প্রায়ই বলতো। তবে ২৮ আগস্ট সন্ধ্যায় আসমা আপা তার মূলসূত্র সাহিদার মাকে নিয়ে বাসায় এসেছিলেন নতুন একটি চুক্তি করতে, যদিও সেটি কোন আলোর মুখ দেখেনি। আমরা দুই পক্ষ একমত হতে পারিনি। নতুন চুক্তিতে পৌঁছতে পারা তাই আমাদের জন্য ছিল এক আনন্দেরই ঘটনা। এখানে উভয়পক্ষের জন্য সেই ব্যর্থ-চুক্তির অভিজ্ঞতার কথা না বললে, আমাদের আনন্দের বিষয়টি ঠিক বোঝানো যাবে না। আমি ও আমার স্ত্রী দুজনেই তামান্নার মার অভাববোধের পীড়া থেকে মুক্তির জন্য নতুন এমন একজনকে গৃহস্থালি কাজের জন্য খোঁজ করছিলাম যিনি তামান্নার মার মতোই আমাদের বাসায় থেকে বাঁধা-কাজ করবেন ও একইরকমের মাসিক বেতন নেবেন। কিন্তু সাহিদার মা আসমা আপাকে ছাড়া কাউকে পাননি।

আসমা আপা যে রুমটায় ভাড়া থাকেন সেটি আমাদের পরের রাস্তার একটি ছোট্ট একটি বাড়ির চিলেকোঠায়। সেখানে তার সন্তানের, যার নাম সিয়াম, তার সঙ্গে আপার নিজের ভাইয়ের ছেলেও থাকে। আসমা আপা প্রথমেই বলে দিলেন যে, তামান্নার মার মতো তিনি রাতে থাকতে পারবেন না। কারণ হল তার পরিবার নিয়ে তিনি রাতে বাসায় ঘুমাতে চান। এটা তো খুবই স্বাভাবিক বিষয়। তিনি সারাদিন অর্থাৎ সকাল সাতটা থেকে রাত সাতটা পর্যন্ত থাকবেন, এর জন্য তাকে অন্য সব বাসায় চলমান তার ছুটা-কাজগুলো ছাড়তে হবে আর তাই তিনি মাসিক বেতন হাঁকলেন আট হাজার টাকা। আমার স্ত্রী এ বেতন শুনে স্তম্ভিত হয়ে পড়লো। তার রেফারেন্স পয়েন্ট হলো, তামান্নার মার মাসিক পাঁচ হাজার টাকার বেতন। আমার স্ত্রীর যুক্তি হলো, বাঁধা-মানুষের বেতন পাঁচ হাজার টাকা হলে ছুটা-কাজের জন্য এতোটা কেন হবে? যদিও সিয়ামের মা বা আমাদের আসমা আপার কাজের যে পরিমাণ সময় দিতে হবে তা বাধা-মানুষের সময়ের প্রায় সমানই। উভয় পক্ষের জন্য একটি গ্রহণযোগ্য সমস্থিতি বিন্দুর খোঁজে আলোচনা করতে করতে আমরা শেষ পর্যন্ত মাসিক সাত হাজার টাকা পর্যন্ত দিতে রাজি হলাম এবং সঙ্গে দুই বেলা খাবার ও বিভিন্ন উৎসব পর্বে তার পরিবারের সকলকে পোশাক-আশাক ও মেহমান এলে বাড়তি কাজের সম্ভাব্য অর্থ - এ সবই আলাপ করলাম। কিন্তু আসমা আপা এ প্রস্তাবে রাজি নন। তার এক কথা : মাসিক বেতন আট হাজার টাকার কমে তিনি এই পরিমাণ সময় দেবেন না। আমার স্ত্রী তার ওপর কিছুটা মনক্ষুণ্ণ হলো। আমার কাছে এখানে আমরা দুই পক্ষই সমান ও ফ্রি-এজেন্ট হিসেবে মনে হলেও আমার স্ত্রী আসমা আপার চুক্তিতে না আসার দৃঢ় সিদ্ধান্তটি প্রশস্ত মনে গ্রহণ করলেন না। আমার পরিস্থিতি এমন ছিল যে, আমি আমার স্ত্রীর মনোভাবের পরিবেশটি কিছুতেই এড়াতে পারছিলাম না। ফলাফল হলো, আমরা কোন চুক্তিতে পৌঁছতে পারলাম না।

আমার স্ত্রী কাজ করেন ব্র্যাকের মানসম্পদ বিভাগে। ব্র্যাক যে কতটা উচ্চতর মূল্যবোধের চর্চা করে তার প্রমাণ আমরা প্রতিনিয়তই পাচ্ছি। আমার খুব ভালো লাগে যে আমার স্ত্রী সেখানে বেশ নিরাপদ পরিবেশে ও সম্মানের সঙ্গে কাজ করে। আমাদের দেশে খুব কম প্রতিষ্ঠানেই নারীর নিরাপত্তা ও যৌন পীড়নমুক্ত সত্যি সত্যিই একটি ক্রিয়াশীল কর্মক্ষেত্র রয়েছে। এদিক থেকে ব্র্যাক আমাদের কাছে শ্রদ্ধার পাত্র। শুধু আমাদের কেন, বিশ্বজোড়া তার কাজের পরিধি, এর সঙ্গে জড়িয়ে আছেন আমাদের দুজন খ্যাতনামা বাঙালি নোবেল বিজয়ীর নাম। অধ্যাপক অমর্ত্য সেন ও অভিজিৎ বিনায়ক ব্যানার্জি। এই আমার কোভিডাক্রান্ত হবার কথা জানতে পেরে ব্র্যাক কর্তৃপক্ষ আমার স্ত্রীকে হোম অফিস বা বাসা থেকে অফিসের ব্যবস্থা করেছে। যারা অতিমারির সময়ে কোভিডাক্রান্ত হয়েছেন তারা সহজেই বুঝতে পারবেন যে, এটি কত বড় মানবিক ও স্বাস্থ্য সুরক্ষায় সঠিক সিদ্ধান্ত। কেবল তাই নয়, আমার শ্বাসকষ্ট হচ্ছিল, এটি তারা জানতে পেরে তাদের অফিসের গাড়িতে করে আমাদের বাসায় দুই হাজার লিটারের অক্সিজেন সিলিন্ডার পৌঁছে দিয়েছে সম্পূর্ণ বিনামূল্যে। অথচ আগের রাতে আমরা পাড়ার ভালো ঔষধের দোকানে অক্সিজেন সিলিন্ডার কিনতে গেলে একই পরিমাণ কন্টেইনারের দাম হেঁকেছিল আঠারো হাজার টাকা। এটিতে সর্বোচ্চ যাবে দুই দিন। আমাদের অত্যন্ত প্রিয় ও শ্রদ্ধেয় স্যার ফজলে হাসান আবেদের দর্শনে গড়ে ওঠা দেশের প্রতি কর্তব্যবোধের জায়গা থেকে ভালোবাসায় মোড়া এই স্বতঃপ্রণোদিত প্রতিষ্ঠানটি অনেক অনুপ্রেরণার; তাঁর আমাদের সবাইকে ছেড়ে চলে যাবার পরও একই মূল্যবোধ নিয়ে প্রতিষ্ঠানটি বেশ ভালোভাবেই চলছে যার সুফল মানুষ ভোগ করে চলেছে।

আমাদের কাছে পরিবারের অর্থ হল সংবেদনশীলতা ও জ্ঞানের পরিধি বাড়িয়ে তোলার ক্ষেত্র। আমার যাপিত জীবনের অভিজ্ঞতায় দেখেছি যে, রক্তের বন্ধনই সবসময় শেষ কথা নয়, ব্যক্তির অনুভূতি যদি কাজ না করে তবে রক্তের বন্ধনও আলগা হতে বাধ্য। আর সম্পর্ক গড়ে ওঠে ও তা দৃঢ়তা পায় অনুভূতি কাজ করলেই। অনুভবের বন্ধনই পরকে আপন করতে পারে, আর অনুভূতি কাজ না করলে রক্তের বন্ধনও অনেক সময় ছিন্ন হয়ে যায়। এই বিষয়ে আমাদের সামনে সবচেয়ে বড় উদাহরণ বঙ্গবন্ধু। বঙ্গবন্ধু হাতে-কলমে দেখিয়ে গেছেন মাটি, মানুষ ও রবীন্দ্রনাথকে কেমন করে অনুভবের এক নবতর সস্পর্কের বন্ধনে আবদ্ধ করতে হয়। ফলে সমাজে মানুষে-মানুষে সংবেদনশীলতা যায় বেড়ে আর এরই ফলে আমরা একে অপরকে ভালোবাসতে পারি ও দুঃখ-কষ্টগুলো ভাগ করে নিতে পারি। আমি এই অনুভব পেয়েছি রবীন্দ্রনাথ পড়ে। আমি রবীন্দ্রনাথকে ভালোবাসি। তিনি আমার মধ্যে এক অদ্ভুত ক্ষমতা সৃষ্টি করেছেন। আমার চারপাশের মানুষ ও জগৎকে অনুভব করার ক্ষমতা। আমি খুব ব্যথিত হই যে মানুষ কেবল প্রয়োজন মেটানোর তাগিদকে মাথায় রেখেই আশপাশের সবকিছুকে দেখে, অনুভব করে না। রবীন্দ্রনাথের অনেক লেখার সঙ্গে আমার আমার আব্বা বেঁচে থাকতে আমাকে পরিচয় করিয়ে দিয়েছেন। আমার আব্বা-আম্মা রবীন্দ্রনাথ অন্তঃপ্রাণ। তাদের কাছে বঙ্গবন্ধু ও রবীন্দ্রনাথ ছিল একাকার। সেটা পরে বলব। এখন না। ছোটবেলায় আমি রবীন্দ্রনাথ হতে চাইতাম। পরে বুঝেছি, সেটি সম্ভব নয়।

ফিরে আসি আসমা আপার কথায়। এই দশ দিনে আসমা আপার যে বিষয়টি আমার ও আমার স্ত্রীর মন কেড়েছে তা হল বাচ্চাদের সঙ্গে তার সম্পর্ক। আমার বাচ্চারা মানুষ তো মানুষ, আমাদের ফ্ল্যাট বাসাটির বারান্দার গাছগুলোর কথাও নাকি তারা বোঝে, তাদের কারণে আমাদের বাসার তেলাপোকা মারা যায় না, বারান্দায় দিনের কোন একটা সময়ে হঠাৎ খেলতে আসা কিছু চড়ুই পাখির কিচিরমিচির শব্দ ও ঝগড়ায় তারা উত্তেজিত হয়, কোন অজানা জায়গা থেকে নিয়মিত চলে আসা বেড়ালের জন্য তাদের অতিথিপরায়নতার সংবেদনশীলতার সঙ্গে আসমা আপা একেবারে মিশে গেছেন। আসমা আপাই এ কদিনে বাচ্চাদের সঙ্গে এসব চমৎকার অভিজ্ঞতা বিনিময় ও এ প্রাণিদের দুরূহ ও দুর্বোধ্য ভাষা অনুবাদের ঘনিষ্ঠ বন্ধু হয়ে উঠেছেন। বাচ্চাদের একঘেঁয়ে জীবন কিছুটা সহজ করতেই আমরা বাসায় একটি একুরিয়াম ও ছোট্ট দুটি লাভ বার্ড রেখেছি। আমি ও আমার স্ত্রী এসব সমৃদ্ধ মুহুর্ত থেকে বঞ্চিত। অর্থনীতিবিদ কৌশিক বসুর কথাটিই সত্য, আমাদের চেয়ে আমাদের পরের প্রজন্ম প্রাণ ও পরিবেশের প্রতি বেশি সংবেদনশীল। আমার মতে, আমাদের বর্তমান প্রজন্ম তো উল্টো, যেগুলো পরিবেশের দূষণ বেশি সৃষ্টি করে, সেগুলোই আমরা বেশি করে করতে পছন্দ করছি। আমাদের পরিবেশের বিবেচনা কেবল মুখেই। আমার মনে হয় যে, আমাদের উত্তর প্রজন্ম কেবল সংবেদনশীলতাই নয়, সামষ্টিক নৈতিকতার ক্ষেত্রেও অনেক অগ্রসর হবে। যে সমাজটি তারা গড়ে তুলবে সেটি আমাদের করা ভুলগুলোর ফলে সৃষ্ট পরিস্থিতিতে নতুন সংবেদনশীলতা ও যুক্তির ভিত্তিতে সম্মিলিতভাবে উচ্চতর সমাজ হবে। আমরা মরে যাব, কেউ আমাদের মনেও রাখবে না, কারণ, আমরা মনে রাখার মতো কোন কাজ করতে পারছি না। কিন্তু তারা আয়ু শেষ হলেও তারাই বেঁচে থাকবে, কারণ, তারা ভবিষ্যতের সুন্দর পৃথিবীর নির্মাণকে দৃঢ়ভাবে বিশ্বাস করেছে।      

বাসার গৃহস্থালি কাজের অতি প্রয়োজনীয় এ চুক্তির আলোচনায় ফিরে আসি। কথা শুরু হল আসমা আপার সঙ্গে। আমাদের এলাকায় প্রতিটি গৃহস্থালি কাজের দর মাসে সাত শত টাকা। ঠিক হল পাঁচটি কাজ করবেন তিনি। মাসে মোট পাবেন তিন হাজার পাঁচ শত টাকা। কিন্তু তিনি প্রশ্ন করলেন আমার স্ত্রীর সামান্য একটি আবদারে। আমার স্ত্রী বলেছিলেন, যে পাঁচটি কাজের কথা বলা হয়েছে তার ভেতর শুধু আমাদের দুজনের জন্য নাস্তা বানানোর সঙ্গে দুটি ডিম ভাজা রয়েছে। কিন্তু আমাদের আরও তিনটি ডিম ভেজে দিতে হবে। কিন্তু আসমা আপা তাতে রাজি নন। আমার স্ত্রীর কাছে এটি সামান্য বাড়তি কাজ যা বিনা ঝামেলাতেই সম্ভব! কিন্তু আসমা আপার যুক্তি হল, আপনি তো ভাবছেন একটি দিনের কথা, কিন্তু সারা মাসে প্রতিদিন তিনটি করে ডিম ভাজতে কত সময় লাগবে, তার বিনিময়ে আমি কী পাব? তিনি আরও বললেন যে, এবার আপনি হিসাব করুন, আমি তো আর এক মাস কাজ করেই চলে যাব না; এই হিসাব বছরে করলে কী দাঁড়াবে? আসমা আপার যুক্তি অকাট্য। আমি এই অচলায়তন কাটানোর জন্য বললাম যে, তিনটি ডিম ভাজার বাড়তি কাজের জন্য আপনার সাড়ে তিন হাজার টাকার সঙ্গে কত যোগ করতে হবে? তিনি বললেন, এটি তো সাত শত টাকার মতো একটি পূর্ণাঙ্গ কাজ নয়, তাই আমাকে মাসের টাকার সঙ্গে পাঁচ শত টাকা যোগ করে দিলেই চলবে। আমি সানন্দে রাজি হলেও আমার স্ত্রীর মনটা ভার। আমার কথা ছিল, প্রতিটি শ্রমের এখানে বিনিময় মূল্য নির্ধারিত হচ্ছে, ফলে এখানে বিনিময় মূল্য ছাড়া আসমা আপার একবিন্দু শ্রমও আইনত তো নয়ই, কোন অর্থেই চাওয়া যাবে না। আমার স্ত্রী অন্য একটি বাড়তি কথাও বলেছিলেন; তা হল ঘর ঝাড়ু ও মোছার কাজ, যেটি সেই পাঁচটি কাজের অন্তর্ভুক্ত ছিল, সেখানে বিছানা ঝাড়াকেও অন্তর্ভুক্ত করতে হবে। আসমা আপা এটিও গ্রহণ করবেন না। তিনি বললেন যে, ঘর ঝাড়ু ও মোছার কাজ করার সময় আমি তো সোফা ঝাড়ু দিচ্ছিই, তার তো কোন আলাদা দাম চাইনি, সেখানে আপনাদের বাসার তিনটি বেডরুমের তিনটি বিছানা ঝাড়ু দিতে হবে তাতে আমার অন্য বসার কাজের সময় ক্ষতিগ্রস্ত হবে। তার এ কথাটিও খুবই শক্তিশালী ভিত্তির ওপর প্রতিষ্ঠিত। আমি বললাম, সেটির জন্যও বেতনের সঙ্গে কত দিতে হবে? তিনি বললেন সেটি আপনাদের বিবেচনা। আমি বললাম আপনার সঙ্গে মৌখিক ভিত্তিতে হোক আর লিখিত হোক, চুক্তি তো চুক্তিই। ঠিক হল সর্বমোট সাড়ে চার হাজার টাকা তিনি বেতন পাবেন মাসে। আমি এর সঙ্গে আমাদের পক্ষ থেকে দুইবেলা (সকাল ও দুপুর বেলার) খাবার যোগ করে দিতে বললাম আমার স্ত্রীকে। যদিও আমাদের এলাকায় বাঁধা-সাহায্যকারি ছাড়া, ছুটা-সহায়তাকারিদের কেউ খাবার দেয় না, তবুও আমরা এমন সিদ্ধান্ত নিলাম।

আমরা যে বাড়িটায় থাকি এটি দুই কাঠার ওপর ৬ তলা একটি বাড়ি। আমার বাবার মৃত্যুর মাত্র বছর তিনেক আগে তাঁর সকল সঞ্চয় দিয়ে এটি গড়ে গেছেন। ভাইবোন ও মাকে নিয়ে আমরা বাড়িতেই সবাই থাকি। আমি থাকি দোতলার ফ্ল্যাটটিতে। এর আয়তন এক হাজার চারশ বর্গফুটের মতো। আমার জন্য সবচেয়ে বড় সুবিধা হল ঢাকায় থাকার জন্য যে আকাশচুম্বি বাড়ি ভাড়া, যা মেটাতে আয়ের ষাট থেকে সত্তুর ভাগ চলে যায়, তার প্রায় কিছুই আমার দিতে হয় না। কারণ, উত্তরাধিকার সূত্রে আমি এখানে প্রায় বিনামূল্যে থাকতে পারি কেবলমাত্র কিছু ইউটিলিটি বিল পরিশোধ করা ছাড়া। আমার এই বাড়তি সুবিধাকে আমি আমার নিজের জীবনের স্বাধীনতা, সক্ষমতা মনে করি আর এজন্যে যে পরিবেশে আমাদের সন্তানেরা সুন্দরভাবে বেড়ে উঠবে বলে আমরা আশা করি- সেই সমাজকে আরও একটুখানি ভালো করে তুলতে সামান্য যে কিছু কাজ করার চেষ্টা করি, যেটি করতে পেরে আমি অনেক আনন্দ পাই, তার বাস্তব চর্চার সুযোগ পেয়েছি।

কিন্তু ফ্ল্যাট-মালিক হিসেবে আসমা আপার সঙ্গে একটি স্বতঃস্ফুর্ত চুক্তিতে পৌঁছতে কোন অসম ক্ষমতা-সম্পর্ক কাজ করেছে কিনা সেটি অবশ্য অন্য প্রশ্ন। আমি আসমা আপার সঙ্গে এইমাত্র পাকা হয়ে যাওয়া নতুন চুক্তি যা সেপ্টেম্বরের পহেলা তারিখ থেকে কার্যকর হতে যাচ্ছে তার ন্যায্যতা নিয়ে ভাবছি। যেমন, আমার মনে আসছে যে, চুক্তির সঙ্গে কি ন্যায্যতার কোন সম্পর্ক রয়েছে? থাকলে সেটি কী? আসমা অপার থেকে যে বিষয়টি আমি শিখলাম তা হল যে ক্ষেত্রে আমরা কোন বিষয়ে দর-দাম করে একটি সমস্থিতি (ইকুইলিব্রিয়াম) বিন্দুতে আসি তার জন্য বাস্তব ঘটনার সঙ্গে সম্পর্কিত পুঙ্খানুপুঙ্খ তথ্য সংগ্রহ। তথ্য জানা বা না জানা - এসবকে আমরা যতই ‘অবহেলা’ করি না কেন, এটিই শেষভাগে সিদ্ধান্ত গ্রহণের ক্ষেত্রে বড় ধরনের গুণগত প্রভাব ফেলে। এর সঙ্গে অবশ্যই জড়িয়ে আছে নিজের জীবনমান তো বটেই, সঙ্গে অন্যেরও। আর বাজারে দর-দাম করতে গেলে অর্থাৎ বার্গেইনের ভেতরদিকে নানা রকমের সমস্থিতি (ইকুইলিব্রিয়াম) বিন্দু আমরা পেয়েই যাব, এটি অনেকটা যান্ত্রিক বিষয়, কিন্তু কোন সমস্থিতি বিন্দুটি অধিক ন্যায্য, অন্তত দুটি পক্ষের ভেতর, সেটি কিন্তু সমস্থিতি বিন্দু বিচার করতে পারবে না। অর্থাৎ সমস্থিতি বিন্দুর সঙ্গে ন্যায্যতার চিন্তার ফারাক রয়েছে। যদিও বাস্তব ক্ষেত্রে অদৃশ্য হস্তের (ইনভিজিবল হ্যান্ড) অনুপস্থিতি থাকলে বাজারের সাধারণ কার্যক্রম অসম্ভব হয়ে পড়বে, ফলে, আমরা বিদ্যমান বর্তমানে আমাদের পণ্য ও সেবা পাবার স্বাধীনতাটুকুও হারাবো।

ইন্টারন্যাশনাল ইকনমিক অ্যাসোসিয়েশনের বর্তমান প্রেসিডেন্ট ও নোবেল পুরস্কারে সম্মানিত অধ্যাপক অমর্ত্য সেনের বিখ্যাত ছাত্র অর্থনীতিবিদ কৌশিক বসুর সাম্প্রতিক লেখা থেকে জানতে পারি যে, ২০০১ সালের নোবেল বিজয়ী অর্থনীতিবিদ জোসেফ স্টিগলিৎজ ও তাঁর দুই বন্ধু জর্জ আকেরলফ ও মাইকেল স্পেন্স তাদের যুগান্তকারী গবেষণার মাধ্যমে দেখিয়েছেন যে, বাজারে চলমান যে অসম তথ্যপ্রবাহ রয়েছে, তার ভিত্তিতে অদৃশ্য হস্ত বা ইনভিজিবল হ্যান্ড সঠিক বিন্দু দিতে পারে না। আর এর ফল গিয়ে পড়ে পণ্য ও সেবার গুণগত মানের ওপর। কিন্তু স্টিগলিৎজ ও তাঁর বন্ধুরা এর সঙ্গে এটি যোগ করেননি যে, অসম তথ্যপ্রবাহের ভিত্তিতে আমরা যেসব সমস্থিতি (ইকুইলিব্রিয়াম) বিন্দুগুলো সয়ংক্রিয়ভাবে পেয়ে যাচ্ছি সেগুলোর বহিস্থঃ প্রভাব বা এক্সটার্নালিটিজগুলোর বিবেচনা কীভাবে করা যাবে। কারণ, অর্থনীতির কর্মকাণ্ড তো আর কেবল ব্যক্তিগত ভোগ ও অধিকারের ভেতরই সীমাবদ্ধ থাকে না; এটি সার্বিক জীবনমান, সমাজে মানুষে মানুষে সম্পর্ক, ন্যায্যতার চর্চা ও একটি সার্বিক সহমর্মিতাভিত্তিক সংহত সমাজের জন্যও অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। এসব বিবেচনার অভাবেই কি আজ আমাদের সমাজ ও শহরটি আনারামদায়ক, কিছুটা দিকভ্রান্ত ও কোথায় যেন মানুষের প্রতি আপসহীন একটা ভাব নিয়ে দাঁড়িয়ে আছে?

আমি অর্থনীতিবিদ অধ্যাপক ওয়াহিদউদ্দিন মাহমুদকে খুব ভালোবাসি। তাঁর মায়াভরা দুটি চোখ। কিন্তু হঠাৎ তাঁর স্ত্রী সিমিন মাহমুদ মারা যাওয়াতে স্যার খুব ভেঙ্গে পড়েন। আমি তাঁর কষ্ট সহ্য করতে পারছিলাম না। দুবার তাঁর হার্টে বাইপাস সার্জারি হয়েছে। কিন্তু বেশি লোকে জানে না যে তিনি শুধু অর্থনীতিবিদই নন, একজন প্রতিভাবান শিল্পী। তিনি খুব সুন্দর পেইন্টিং করেন। ভালো গানও গান। আমাদের ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে আমার সংগঠনে তিনি দু-তিনটে বক্তৃতা দিয়েছিলেন। তাঁর আলোচনা আমার খুব ভালো লেগেছিল। তিনি বলেছিলেন, তোমার মা যখন ঝাড়ু বিক্রেতার কাছ থেকে একটি ঝাড়ু কেনার জন্য দর-দাম করে, তখন শক্তভাবেই সে দর-দাম করে। এই দুই টাকা বা পাঁচ টাকার কী আর মূল্য? কিন্তু দর-দামের সময় সে সামান্য পরিমাণ তারতম্য কতোই বড় ভূমিকা রাখে। পঁয়ত্রিশ টাকা না সাঁইত্রিশ টাকা নাকি চল্লিশ টাকা, সেগুলোর অর্থ অনেক বড় হয়ে যায়। অর্থশাস্ত্র তো বিজ্ঞান। অর্থশাস্ত্র তো অংক। হয় তুমি অংক করতে পার, না হয় পার না। অংকের আবার ভালো-মন্দ কী? এটি কিন্তু অনেকেই বুঝতে পারে না। আমাদের দেশের অর্থশাস্ত্র চর্চার গুণ নেই। অধ্যাপক ওয়াহিদউদ্দিন মাহমুদের মতো মেধাবী মানুষ আর দু-এক জন থাকলে ভালো হত দেশের জন্য।

আমাদের বাংলাদেশের রাজনৈতিক অর্থনীতির জনক চারজন অর্থশাস্ত্রী। তাঁদের কথা এভাবে লোকে জানে না। তাঁরা খুব বড় মাপের মানুষও। আমার শ্রদ্ধা ও ভালোবাসার মানুষ তাঁরা। আমি তাঁদের নিয়ে কয়েক বছর কাজ করে নতুন অনেককিছু জানতে পেরেছি। তাঁরা হলেন : অধ্যাপক নুরুল ইসলাম, অধ্যাপক রেহমান সোবহান, অধ্যাপক আনিসুর রহমান ও অধ্যাপক মোশাররফ হোসেন। কিন্তু তাঁদের প্রাণ ভ্রমরা কে জানেন? তিনি হলেন আমাদের জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান। কোষের নিউক্লিয়াস যেমন পুরোটাকে ধরে রাখে, তেমনি তাঁরা একে অপরকে ভালোবেসে দেশের জন্য সমস্ত মেধা ঢেলে দিয়েছেন। তাঁরা চারজনই বঙ্গবন্ধুকে খুব ভালোবাসতেন আর বঙ্গবন্ধুও তাঁদেরকে। তাঁদের সবার স্মৃতিকথায় এসব লেখা আছে। আমার খুব কষ্ট লাগে তাঁদের (বঙ্গবন্ধু ও চারজন অর্থশাস্ত্রী) সম্পর্কে নতুন প্রজন্ম বেশিকিছু জানে না। এই না জানার ফলে তারা নিজেদের থেকে বাংলাদেশটাকেই হারিয়ে ফেলেছে। এতো কষ্টে পাওয়া এই দেশটির মূল্য তারা বোঝে না। জানেও না কী হারিয়েছে। আমাদের ছেলেমেয়েরা লেখাপড়া শিখলে কী হবে, বোধ তো সৃষ্টি হচ্ছে না। এই চারজন অর্থনীতিবিদের পরপরই, সবচেয়ে মেধাবী অর্থনীতিবিদ, আমার মতে, ওয়াহিদউদ্দিন মাহমুদ। আর একজন আছেন অর্থনীতিবিদ। তিনিও অনেক মেধাবী কিন্তু ধরা দেন না। তিনি ড. মসিউর রহমান। মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর উপদেষ্টা। বঙ্গবন্ধুর পিএস ছিলেন। বঙ্গবন্ধু সম্পর্কে অনেক অজানা কথার এক বিরাট ভাণ্ডার তিনি। ড. মসিউর রহমান স্যারের বঙ্গবন্ধুর ওপর স্মৃতিকথার বই লেখা উচিত।

আহমেদ জাভেদ : দ্য পিপলস ইউনিভার্সিটি অব বাংলাদেশের অর্থনীতি বিভাগের সহকারি অধ্যাপক ও বাঙলার পাঠশালা ফাউন্ডেশনের প্রতিষ্ঠাতা ও সভাপতি। বর্তমানে তিনি বাংলা ভাষায় অমর্ত্য সেন পাঠচক্রের সমন্বয়কের দায়িত্ব পালন করছেন। তাঁর সর্বশেষ সম্পাদিত গ্রন্থ 'বাংলাদেশের সংবিধান : নানা প্রসঙ্গ' (গ্রন্থটির ভূমিকা লিখেছেন সদ্য প্রয়াত জাতীয় অধ্যাপক আনিসুজ্জামান) প্রকাশিত হয় অন্যপ্রকাশ থেকে ২০২০ সালে। ভারতের আনন্দ পাবলিশার্স থেকে সম্প্রতি অমর্ত্য সেনের বক্তৃতা ও সাক্ষাতকারভিত্তিক 'বলা যায়' গ্রন্থে আহমেদ জাভেদের একটি অনুবাদ সংকলিত হয়েছে। অমর্ত্য সেনের বহুল প্রতীক্ষিত আত্মজীবনী 'হোম ইন দ্য ওয়ার্ল্ড : আ মেমোয়ার' (স্মৃতিকথা : ঘরে-বাইরে) প্রকাশিত হয়েছে ২০২১ সালের জুলাই মাসে বিখ্যাত পেঙ্গুইন বুকসের অ্যালেন লেন প্রকাশনী থেকে। অমর্ত্য সেন নতুন এ বই বাংলায় অনুবাদ করার লিখিত অনুমতি আহমেদ জাভেদকে দিয়েছেন এ বছরের আগস্ট মাসে।