By সায়মা রহমান এশা
চা বাগানের রাজকুমার...
Media School September 15, 2021
লেকের পরিচ্ছন্নতাকর্মী রাজকুমার।
ইঁট-পাথরের শহর ঢাকা ছেড়ে সবুজের টানে সম্প্রতি ঘুরতে গিয়েছিলাম চায়ের রাজধানী শ্রীমঙ্গলে। শ্রীমঙ্গলের মৌলভীবাজারে অবস্থিত মাধবপুর চা বাগান, আর তারই কোলঘেঁষে মাধবপুর লেক। সেখানেই পরিচয় হয় লেকের পরিচ্ছন্নতাকর্মী রাজকুমারের সাথে। কাঠফাটা রোদে লেকের পাশে বিশ্রামের বেঞ্চে বসতে গেলে নিজ থেকে এগিয়ে এসে তা পরিষ্কার করে দিয়ে নিজের পরিচয় দেন তিনি। পঞ্চাশোর্ধ্ব রাজকুমারের আদি নিবাস ভারতের আগরতলায়। স্ত্রী আর দুই মেয়ের সংসারে স্ত্রী প্রধান উপার্জনকারী। জানালেন, চা বাগানের নিয়মানুসারে ঘরপ্রতি একজন স্থায়ী কাজের সুযোগ পাবে। তাই তার স্ত্রীর উপার্জন পুরো পরিবারের ভরসা। দৈনিক ২৪ কেজি চা পাতা তুললে ১২০ টাকা করে দেওয়া হয় আর সপ্তাহে ৩ কেজি আটা দেওয়া হয় রেশন হিসাবে।
'এই টাকায় কি সংসার চলে আপা? আমরা আন্দোলন করি ১০৮ টাকা থিকে ১২০ টাকা করেছি তাও চলা মুশকিল' - বলে অসহায় দৃষ্টিতে তাকান রাজকুমার। জানান, এই উচ্চমূল্যের বাজারে পরিবার নিয়ে চলা মুশকিল তাই লেকের আশেপাশে তার পরিষ্কার করার কাজ দেখে বাগানের বাবু তাকে অস্থায়ী কাজে রেখেছেন, বিনিময়ে সপ্তাহে ৪০০ টাকা দেওয়া হয়। টাকা জমিয়ে বড় মেয়েকে বিয়ে দেবেন পাশের চা-বাগানেই, নিজের গোত্রের ছেলের কাছে। যদি অন্য কোথাও বিয়ে দেন তাহলে জাত যাবে আর সে ক্ষেত্রে গোত্রপতিরা ২০ থেকে ২৫ হাজার টাকা জরিমানা করতে পারে। আর এর মধ্যে অসুখ-বিসুখ বিনা দাওয়াতের মেহমান, তাই ধার-দেনা লেগেই থাকে।
তিনি জানান, ভারতে থাকা বৃদ্ধা মায়ের দেখা পান না বহু বছর। অর্থের অভাবে পাসপোর্ট করা সম্ভব না আর পাসপোর্ট ছাড়া ভারতে যাওয়া সম্ভব না। 'মা কয়, রাজকুমার, বয়স তো হইছে অনেক, এখন তোগোক দেখি মরিতে মুন চায়' বলে চোখ মুছে নিলেন তিনি চট করে।
আলাপে আলাপে রোদ একটু কমে এলে উঠে পড়লাম পরবর্তী গন্তব্যের উদ্দেশে। ফেরার আগে চা-নাস্তার জন্য কিছু টাকা দিতে চাইলে তা নিতে অস্বীকৃতি জানান রাজকুমার। আবার এলে তার সাথে দেখা করব- এই প্রতিশ্রুতির পর বিদায় নিয়ে গাছের আড়ালে হারিয়ে যায় বৃদ্ধা মায়ের রাজকুমার।
সায়মা রহমান এশা : শিক্ষার্থী, জার্নালিজম অ্যান্ড মিডিয়া স্টাডিজ বিভাগ, সেন্ট্রাল উইমেন্স ইউনিভার্সিটি।