By সজীব সরকার
কগনিটিভ বায়াস (Cognitive Bias) বা অবধারণগত পক্ষপাত
Media School May 8, 2024
প্রতীকী ছবি।
কোনো বিষয়কে ব্যাখ্যা করার জন্য বা কোনো বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেওয়ার জন্য আমরা সাধারণত কিছু তথ্য-উপাত্তের ওপর নির্ভর করি। প্রাসঙ্গিক তথ্য-উপাত্ত পর্যালোচনা করেই আমরা একটি ধারণা তৈরি করি বা সিদ্ধান্ত নিয়ে থাকি। যে-কোনো বিষয় সঠিকভাবে ব্যাখ্যা করার জন্য বা যৌক্তিক একটি সিদ্ধান্ত নেওয়ার জন্য তথ্যকে বস্তনিষ্ঠভাবে পর্যালোচনা করা জরুরি।
অনেক সময় তথ্য বিশ্লেষণের প্রক্রিয়ায় নানা ধরনের পক্ষপাত থাকতে পারে। আর, তথ্য-উপাত্ত বিশ্লেষণের প্রক্রিয়া পক্ষপাতদুষ্ট হলে গৃহীত সিদ্ধান্তও পক্ষপাতমূলক হয়। তাহলে, এ ধরনের সিদ্ধান্ত বা ধারণায় পক্ষপাত থাকাই হলো কগনিটিভ বায়াস (Cognitive Bias) বা অবধারণগত পক্ষপাত।
অবধারণগত পক্ষপাতের একটি উদাহরণ হলো, `পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা মেধাবী আর বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা মেধাহীন`। এমন একটি ধারণা অনেকের মনেই রয়েছে; তবে, এর বৈজ্ঞানিক বা বাস্তব কোনো ভিত্তি নেই। কারণ, এটি পরীক্ষিত বা প্রমাণিত কোনো সত্য নয়।
পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ুয়া সব শিক্ষার্থীই মেধাবী- এটি নিশ্চিত নয়। আর, বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়েও মেধাবী অনেক শিক্ষার্থীই রয়েছে। দুই ধরনের বিশ্ববিদ্যালয় থেকেই শিক্ষার্থীরা পাস করে বেরিয়ে কর্মক্ষেত্রে ভালো করছে এবং তেমন ভালো করতে পারছে না - এই দুই রকমের উদাহরণই রয়েছে।
অন্য উদাহরণে বলা যায়, কিছু প্রতিষ্ঠানের নিয়োগকারী কর্তৃপক্ষের মধ্যে এমন ব্যক্তি রয়েছেন, যারা মনে করেন নারীরা পুরোপুরি মনোযোগ দিয়ে অফিসের কাজ করবেন না- তারা কাজের মধ্যেও ঘর-সংসারের জটিলতা টেনে আনবেন। এর বিপরীতে পুরুষরা বরং পরিপূর্ণ আন্তরিকতার সঙ্গে অফিসের কাজ করবেন। এ কারণে অনেকেই একজন নারী প্রার্থীর কাঙ্ক্ষিত যোগ্যতা থাকার পরও তাকে বাদ দিয়ে একজন পুরুষ প্রার্থীকে নিয়োগ দিতে স্বাচ্ছন্দ্য বোধ করেন।
সাধারণত সংসার সামলানোর সার্বিক দায়-ভার নারীর ওপরই থাকে বলে নারীরা অফিসের কাজে মনোযোগী হবেন না- এমন ভাবনাও অবধারণগত পক্ষপাতের উদাহরণ। কেননা, ওই নারীকে প্রথমে নিয়োগ দিয়ে এরপর তার পারফরম্যান্স যাচাই করে এমন সিদ্ধান্ত নেওয়া হচ্ছে না; বরং, আগে থেকেই নারী প্রার্থীদের ব্যাপারে এমন ধারণা পোষণ করা হচ্ছে।
অবধারণগত পক্ষপাতের কারণে কোনো বিষয়ে আমাদের মূল্যায়ন ভুল হওয়ার ঝুঁকি থাকে। পক্ষপাতমূলক পূর্ব-ধারণার কারণে আমরা তথ্য-উপাত্তকে বস্তুনিষ্ঠভাবে যাচাই করতে ব্যর্থ হই; বরং, যে বিশেষ পক্ষপাত বা বিশ্বাস আমরা মনে ধারণ করছি, সে অনুযায়ীই আমরা তথ্য, ঘটনা বা ব্যক্তিকে বিশ্লেণ করি। এর ফলে সে বিষয়ে আমাদের মনে সার্বিকভাবে যে ধারণা তৈরি হয় বা আমরা যে সিদ্ধান্তটি নিই, সেটিও পক্ষপাতমূলক বা ভুল হয়।
অর্থাৎ, এমন পদ্ধতিতে জন্মানো ধারণা বা সিদ্ধান্ত সবসময় নির্ভরযোগ্য হবে না। এ কারণে আমাদের ব্যক্তিগত, পারিবারিক, সামাজিক ও পেশাগত জীবনসহ নানা ক্ষেত্রেই অবধারণগত পক্ষপাতের নেতিবাচক প্রভাব পড়ার ঝুঁকি রয়েছে। তাই, এ ঝুঁকি এড়াতে হলে কোনো সিদ্ধান্ত নেওয়ার আগে প্রাসঙ্গিক তথ্যগুলোকে সঠিক উপায়ে ও বস্তুনিষ্ঠভাবে পর্যালোচনা করা হচ্ছে কি না, তা নিশ্চিত করতে হবে।
অবধারণগত পক্ষপাতের অনেক কারণ ও ধরন রয়েছে ।
কারণ
তথ্য বা জ্ঞানের সীমাবদ্ধতা, তথ্য বিশ্লেষণের ক্ষমতার সীমাবদ্ধতা, এককভাবে শুধু পূর্ব-অভিজ্ঞতা থেকে সিদ্ধান্ত নেওয়ার প্রবণতা, আবেগ, বয়স এবং সামাজিক চাপের মতো নানা বিষয় এমন পক্ষপাতের কারণ বা উৎস হতে হতে পারে।
ধরন
- কনফার্মেশন বা মাইসাইড বায়াস (Confirmation or Myside Bias)
- অ্যাভেইলেবিলিটি হিউরিস্টিক বা অ্যাভেইলেবিলিটি বায়াস (Availability Heuristic or Availbility Bias)
- অ্যাংকরিং বায়াস (Anchoring Bias)
- অ্যাক্টর-অবজার্ভার বায়াস (Actor-observer Bias)
- ব্যান্ডওয়াগন ইফেক্ট (Bandwagon Effect)
- প্লাসিবো ইফেক্ট (Placebo Effect) - ইত্যাদি।
নানা উপায় বা কৌশল অবলম্বন করে অবধারণগত পক্ষপাতের মাত্রা বা ঝুঁকি কমিয়ে আনা সম্ভব।