Media School

Dhaka    Saturday, 01 February 2025

By সজীব সরকার

অ্যাকটিভ লিসেনিং (Active Listening) বা সক্রিয় শ্রবণ কী?

Media School January 21, 2025

সক্রিয় শ্রবণের জন্য বক্তার প্রতি অখণ্ড মনোযোগ দেওয়া দরকার। প্রতীকী ছবি।

সার্বিকভাবে বললে, অ্যাকটিভ লিসেনিং (Active Listening) হলো যোগাযোগের বিশেষ এক ধরনের দক্ষতা। বাংলায় এটিকে সাধারণত 'সক্রিয় শ্রবণ' বলা হয়। এর মানে হলো- কথোপকথনের সময় নিষ্ক্রিয় শ্রোতার ভূমিকায় না থেকে যোগাযোগ প্রক্রিয়ায় সক্রিয়ভাবে অংশ নেওয়া।

অ্যাকটিভ লিসেনিং বা সক্রিয় শ্রবণ হলো একইসঙ্গে অনেকগুলো উদ্যোগ বা প্রচেষ্টার সমন্বিত ফল। যেমন :

- সক্রিয় শ্রবণ তখনই সম্ভব, যখন আপনি আলোচনার সময় সক্রিয় থাকবেন। নিষ্ক্রিয় না থেকে বক্তার সঙ্গে নিজেও আলোচনায় অংশ নিতে হবে। এতে আলোচনা একমুখী না হয়ে বরং মিথষ্ক্রিয়ার পরিবেশ তৈরি হবে।
- বক্তার কথা ভাসাভাসাভাবে না শুনে তার কথার অর্থ স্পষ্টভাবে বোঝার চেষ্টা করা দরকার।
- বক্তা যা বলতে চাইছে, সক্রিয় আলোচনার মাধ্যমে তা স্পষ্টভাবে বুঝতে চেষ্টা করতে হবে।
- বক্তার কোনো কথা স্পষ্টভাবে বুঝতে না পারলে তা আবারো জিজ্ঞেস করে ভালোমতো বুঝে নিতে হবে।
- বক্তার কথার মধ্যে দরকারমতো প্রত্যুত্তর বা ফিডব্যাক (প্রচলিত বাংলায় 'ফলাবর্তন') দেওয়া জরুরি। এতে বক্তা আশ্বস্ত হবেন যে আপনি তার কথা সত্যিই শুনছেন এবং এ আলোচনায় আপনি যথেষ্ট আগ্রহী।
- সক্রিয় শ্রবণের জন্য বক্তার প্রতি অখণ্ড মনোযোগ দেওয়া দরকার। যখন কোনো আলোচনা বা কথোপকথন চলমান, তখন সেদিকেই পূর্ণ মনোযোগী হওয়া দরকার।
- সক্রিয় শ্রোতা হতে অন্যের কথাগুলো সময় নিয়ে শোনার মতো ধৈর্য থাকা দরকার।
- যখন আপনি সক্রিয়ভাবে কারো কথা শুনবেন, তখন বক্তা বুঝতে পারবেন যে আপনি তাকে যথেষ্ট গুরুত্ব দিচ্ছেন। এতে উভয়ের মধ্যে ইতিবাচক যোগাযোগের পথ সুগম হয় এবং ক্রমান্বয়ে ভালো বোঝাপড়া তৈরি হয়। তাই, কথোপকথনের সময় যথেষ্ট যত্নশীল হতে হবে।
- শ্রোতা হিসেবে সহনশীলতা দেখানো জরুরি। বক্তার কথা বা কোনো ধারণার সঙ্গে আপনার নিজের মতামত সবসময় না-ও মিলতে পারে; এজন্য উত্তেজিত হয়ে যাওয়া বা তার কথাকে বাতিল করে দেওয়া ঠিক নয়। বক্তাকে তার অবস্থান থেকেও বুঝতে চেষ্টা করতে হবে। এজন্য আপনার মধ্যে সমানুভূতি (empathy) থাকা জরুরি। মতের ভিন্নতা দেখা দিলেও পরস্পরকে শ্রদ্ধা করতে হবে। ভিন্নমতকে শ্রদ্ধা করতে হবে।
- অনেক সময় কেউ হয়তো শুধু নিজের মনের কথাগুলো আপনার সঙ্গে শেয়ার করতে চায়; কোনো ধরনের মন্তব্য বা বিচার-বিশ্লেষণ কিংবা সমাধান হয়তো সবাই সবসময় আশা করে না। এমন পরিস্থিতিতে অকারণ মন্তব্য বা তীর্যক মন্তব্য করা একেবারেই অনুচিৎ।

কেউ যখন নিজের কোনো কথা আপনাকে বলছে, তখন আপনার সক্রিয় ও ইতিবাচক ভূমিকা পালন করতে হবে। তার কথাগুলো আগ্রহ নিয়ে শোনা হলে এবং সক্রিয়ভাবে আলোচনায় অংশ নিলে ওই ব্যক্তি নিজেকে এবং নিজের কথাগুলোকে 'গুরুত্বপূর্ণ' ভাবার সুযোগ পায়। যে-কোনো বক্তার কাছে এ বিষয়টি খুব গুরুত্বপূর্ণ। কারো সাথে কথোপকথনের সময় চুপচাপ শুধু শুনে গেলে যোগাযোগ ফলপ্রসূ হয় না। সক্রিয় শ্রবণের অভাবে অনেক গভীর বা কাছের সম্পর্কেও দূরত্ব তৈরি হওয়ার ঝুঁকি থাকে। এর বিপরীতে, সক্রিয়ভাবে কথা শুনলে শ্রোতার প্রতি বক্তার আস্থা ও শ্রদ্ধার বোধ তৈরি হয়। এতে সম্পর্কগুলোর মধ্যে মুক্ত আলোচনার সুযোগ বাড়ে এবং সম্পর্কগুলো আরো মজবুত হওয়ার সম্ভাবনা বাড়ে।